বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রের স্বজন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কলেজছাত্রের স্বজন ও সহপাঠী এবং হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে উভয়পক্ষ। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করলে হাসপাতালের সামনে বান্দরোডে পাল্টা সড়ক অবরোধ করেন নিহতের স্বজন ও সহপাঠীরা।
খবর পেয়ে রাত সোয়া ১০টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় তিনি দুপক্ষকেই তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। পরে মেয়রের আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজে ফিরে যান এবং নিহতের স্বজনেরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন।
ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাকিন আহমেদ জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। পরে সিটি মেয়রের আশ্বাসে রাত ১০টার দিকে গেটের তালা খুলে কাজে যোগদান করেন।
অপরদিকে, নিহত রিয়াদ হোসেনের স্বজনদের অভিযোগ—ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা রিয়াদ হোসেনের মরদেহ আটকে রেখেছিলেন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত দুজনের চিকিৎসা কার্যক্রম স্থগিত রাখেন তাঁরা। এ ঘটনায় রিয়াদের মরদেহ নিয়ে যেতে এবং আহত ব্যক্তিদের সুষ্ঠু চিকিৎসার দাবিতে ১০টার দিকে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। পরে সিটি মেয়র এসে লাশ নিয়ে যাওয়া ও আহতদের চিকিৎসার আশ্বাস দিলে সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন। অপরদিকে, হাসপাতালের সামনে নিহতেরা স্বজনেরা সড়ক অবরোধ করলে নগরীজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে রয়েছি। উভয়পক্ষ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে চলে গেছে। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’
এর আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের রিয়াদ হোসেন নামের এক ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং ওই ছাত্রের স্বজনদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এরই মধ্যে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাওন ও আনোয়ার নামের দুজনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত রিয়াদ হোসেনসহ তিন বন্ধুকে নিয়ে হাসপাতালে যান তাঁদের বন্ধুরা। এরপর তাঁদের চারতলার সার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা রিয়াদকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অপর দুজনের চিকিৎসা শুরু করেন।
পরে রিয়াদের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এবং চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ হয়ে সার্জারি ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে হামলা চালানো হয়। ওই কক্ষের জানালা এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন রিয়াদের বন্ধুরা। এ সময় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের লাঞ্ছনা করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও আনসাররা প্রতিরোধ গড়লে তাঁরা সরে যান।
সার্জারি ইউনিটে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক অর্নব খান বলেন, ‘রোগী মারা যাওয়ার পর কলেজ ইউনিফর্ম পরা তাঁর বন্ধু-বান্ধব এসে হামলা চালান। রুমে থাকা দুই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এ সময় তাঁরা আমাদের ওপরেও হামলা চালান।’