বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর : যুবলীগ নেতা বহিষ্কার
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয়ে স্থাপিত বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আনিছুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, ‘কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিছুর রহমানকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাকিবুল হাসান জানান, আজ শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমারখালী আমলি আদালতে আসামি আনিছুর রহমান, সবুজ হোসেন ও হৃদয় আহমেদকে হাজির করা হয়। প্রত্যেক আসামির জন্য সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আগামীকাল রোববার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ভাস্কর্য ভাঙার সঙ্গে জড়িত কয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আনিছুর রহমান, সবুজ হোসেন ও হৃদয় আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনার সঙ্গে মোট চারজন জড়িত রয়েছেন বলে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন। অপরজনের নাম বাচ্চু। তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, কলেজ কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হয়তো ভাস্কর্যটি ভাঙা হয়েছে।’
ওই কলেজের নৈশ প্রহরীর বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘রাত ১১টা থেকে আসামিরা আড্ডার ছলে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলেন। রাত পৌনে ১টার দিকে তারা হাতুড়ি দিয়ে ভাস্কর্যে তিনটি আঘাত করে চলে যান।’
জেলার সব ভাস্কর্যস্থলে সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও নিরাপত্তা প্রহরী নিযুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘গতকাল শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কুমারখালীর বিভিন্ন জায়গা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে কুমারখালীর কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে স্থাপিত ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঘা যতিনের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। কলেজের নৈশপ্রহরী খলিল মিয়া দুটি মোটরসাইকেলে চারজনকে চলে যেতে দেখেছেন বলে জানান। ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার রাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ। এতে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান বলেন, ‘অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বাকি আসামিকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।’
এদিকে, বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীন কুষ্টিয়ার কয়া ইউনিয়নে তাঁর নানার বাড়িতে ১৮৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বরে ভারতের বালেশ্বর বুড়িবালাম তীরে মাত্র চারজন যোদ্ধা নিয়ে বিশাল ব্রিটিশ সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন। এই যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান।
বাঘা যতীনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালে কয়া মহাবিদ্যালয়ের সামনে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দুই মাদরাসা ছাত্রসহ চার আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।