বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হচ্ছে : জয়নুল আবেদীন

Looks like you've blocked notifications!
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে জয়নুল আবেদীন বক্তৃতা দেন। ছবি : এনটিভি

বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমার কানে একটা কথা এসেছে—আমাদের দলের মধ্যে একটা ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হালুয়া-রুটি দেবে, এই লোভে কিছু লোক চলে যাবে। যদিও আমি এ ধরনের লক্ষণ দেখি না। তারপরও যা কানে শুনি, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই—আপনারা যদি হালুয়া-রুটির লোভের কারণে চলে যান, দলের সঙ্গে বেইমানি করেন, এ বেইমানদের জায়গা বাংলাদেশের মাটিতে হবে না।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে জয়নুল আবেদীন এ কথা বলেন। 

সরকারের উদ্দেশে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এই দল জিয়াউর রহমানের দল, খালেদা জিয়ার দল, তারেক রহমানের দল। যত চেষ্টাই করেন, এই দলকে ভাঙা যাবে না। এই দল মচকাবে, ভাঙবে না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে শুনেছেন। এই দল ভাঙার ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাসীনেরা বক্তব্য দিচ্ছে—সরকার পতনের জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সরকারকে বলব, এটা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নয়, দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। দেশের মানুষ যে আন্দোলন করছে, এটা আপনাদের পতনের আন্দোলন। এই ষড়যন্ত্রের কথা বলে আপনারা থামাতে পারবেন না।’

এ সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘আন্দোলনের কী দেখেছেন? এরশাদ নয় বছর ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাদের দেশনেত্রীর নেতৃত্বে আন্দোলন সফল হয়েছে। কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসেনি। আপনারা হচ্ছে বড় স্বৈরাচার। ভাবছেন, আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। শ্রীলঙ্কার কথা স্মরণ করুন। কীভাবে জনগণের আন্দোলনের কাছে হার মেনেছে। আমাদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশনায়ক তারেক রহমান, অতএব এ আন্দোলন থামানো যাবে না।’ ‘এ সরকারের বেশি দিন সময় নেই’ বলে উল্লেখ করেন জয়নুল আবেদীন।

অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া একটি টাকা আত্মসাৎ না করেও তাঁকে জেলেপুরে রাখা হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, তাঁর নাকি বিদেশে চিকিৎসা করারও সুযোগ নেই। সম্প্রতি মেহেরপুরের এক সভায় আইনমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে আমি বলেছিলাম, আইনে সুযোগ রয়েছে ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার। আইনমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, যদি আইনে সুযোগ না থাকে, আমি জীবনে কোনো দিন সুপ্রিম কোর্টে ওকালতি করব না। আর, যদি সুযোগ থাকে তাহলে আইনমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। আইনমন্ত্রী আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। সরকার আসলে খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। আল্লাহর অসীম রহমতে খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন। আমি আশা করি, এ সরকারের পতন না দেখে খালেদা জিয়া মৃত্যু হবে না।’

এ ছাড়া অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী উপস্থিত নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের দিকে দেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন। বোন তার ভাইকে হারিয়েছে, মা-বাবা সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন, সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছে। এসব পরিবার হারানো লোকজন স্বজনদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছেন। আশা করে আছেন—এ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে স্বজনহারা পরিবার তার প্রিয় স্বজনের সন্ধান পাবে। আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ভোটাধিকার ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। এর জন্য আমাদের আরও প্রস্তুতি নিতে হবে।’

সম্প্রতি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দল ও জোটের নেতাদের বাড়ি-গাড়িতে হামলা অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শনিবার দেশের সব জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করছে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব ও সম্পাদক পর্যায়ের ৭৫ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরে অবস্থান করছেন।

ঢাকা জেলা বিএনপির সমাবেশে জেলার সভাপতি ডা. মো. সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকের পরিচালনায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা তমিজ উদ্দিন, নিপুণ রায় চৌধুরীসহ জেলা ও থানার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।