সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও দেশপ্রেমিক বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজনীতির মাঠে চরম ব্যর্থতায় নিপতিত বিএনপি এখন নিজেদের হতাশা ও নিরাশার মাপকাঠিতে জনপ্রত্যাশা পরিমাপের ব্যর্থ চেষ্টায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। রাজনীতির ভুল ট্রেনে ওঠা বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখন পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের অন্ধকার বগির দিশেহারা যাত্রীর মতো প্রলাপ বকছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সার্চ কমিটি নিয়ে করা মন্তব্যের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই সার্চ কমিটির প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলকে তাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। জনগণ প্রত্যাশা করে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের যে শপথ নিয়ে সার্চ কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে- তা পরিপূর্ণ রূপে বাস্তবায়িত হবে।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুসন্ধান কমিটি (সার্চ কমিটি) নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে জাতির প্রত্যাশার কথা বলেছেন। আমরা বিএনপির মর্মবেদনা বুঝি। রাজনীতির মাঠে চরম ব্যর্থতায় নিপতিত বিএনপি এখন নিজেদের হতাশা ও নিরাশার মাপকাঠিতে জনপ্রত্যাশা পরিমাপের ব্যর্থ চেষ্টায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক বিধান ও আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। সার্চ কমিটির সকল সদস্য নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত এবং তারা প্রত্যেকেই আমাদের জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। পেশাগত কাজের বাইরেও আপন কর্মের মহিমায় তারা স্বতন্ত্র পরিচিতি অর্জন করেছেন এবং দেশ-জাতির প্রতি তাদের ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা প্রশ্নাতীত। আইন অনুযায়ী সাংবিধানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও দেশপ্রেমিক বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে- এই সার্চ কমিটির প্রতি জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।

বিবৃতিতে কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের আস্থা ও প্রত্যাশাকে ধারণ করেই রাজনীতি করে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির একমাত্র শক্তিই হলো জনগণ। জনপ্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি ও পথচলা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল, খুনি জিয়া-মোশতাকের চক্রান্তে তা থমকে যায়। অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল এবং খুনিচক্র ও স্বাধীনতাবিরোধীদের স্বার্থ সংরক্ষণের শপথের মধ্য দিয়ে বিএনপির পথ চলা শুরু হয়।

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি এখনও সেই স্বৈরতন্ত্র-সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রত্যাশা বাস্তবায়নের অপরাজনীতিতে ব্যস্ত। তাদের মুখে জনপ্রত্যাশা শব্দটি মানায় না। জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করতে হলে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে হয়। জনগণের প্রতি আস্থাশীল হতে হয়, জনমত যাচাইয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সৎ সাহস থাকতে হয়। যা বিএনপির নেই এবং কখনও ছিলও না।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সব সময় দলীয় ও গোষ্ঠী স্বার্থে রাজনীতি করে। তাই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন তখন বিএনপি নেত্রী কি আচরণ করেছিলেন দেশবাসী তা ভুলে যায়নি! সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জনগণের ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য তখন বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সংবিধানের মূল চেতনায় সমুন্নত গণতান্ত্রিক রীতি বাস্তবায়নে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি বিএনপি। উপরন্তু তারা আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টি করে শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে তাদের মূল এজেন্ডা ছিল যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে সুরক্ষা প্রদান করা। যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচন বর্জন এবং আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে গণতন্ত্র বিকাশের পথকে বাধাগ্রস্ত করার যে ষড়যন্ত্র বিএনপি সেদিন শুরু করেছিল, তারই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালেও তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। আজও তারা গণতন্ত্রের রীতি-নীতিকে বর্জন ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের স্টেশনে রাজনীতির যে ট্রেনে বিএনপি উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল তা আজ বহু দূর এগিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ঘড়ির কাঁটা কারও জন্য থেমে থাকে না- তা আপন গতিতে এগিয়ে চলে। রাজনীতির ভুল ট্রেনে ওঠা বিএনপি নেতৃবৃন্দ এখন পরিত্যক্ত প্ল্যাটফর্মের অন্ধকার বগির দিশেহারা যাত্রীর মতো প্রলাপ বকছে।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বর্জন ও পরিত্যাগের ভ্রষ্ট নীতি পরিহার করে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুশীলনের আহ্বান জানিয়েছেন।