বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ইদানিং সবার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহনশীলতা দেখা যাচ্ছে। এ অসহিষ্ণুতা বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে আমরা আইনের শাসনের জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’
আজ রোববার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের ভাবতে হবে আপনারা আদালতের অংশ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আদালত ঠিকমতো সচল রাখা সম্ভব নয়। আমরা আইনজীবী ও বিচারকরা মিলে এক সঙ্গে চেষ্টা করতে চাই মামলার জট যাতে ছেড়ে যায়। আমি মনে করি জুডিশিয়ারিতে বিচারক যদি ডান হাত হয়, তাহলে আইনজীবী বাম হাত। এক হাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কাজ ঠিক মতো হবে না।’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এদেশের মানুষ এক সময় জবের ছাতু, কচু-ঘেচু খেতো। দেশের স্বাধীনতা আমাদের অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা আর আগের জায়গায় নেই। অনেক সড়ক নির্মিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি আশাবাদী মানুষ, আমিও আশাবাদী। আস্তে আস্তে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশের তিনটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ। এর কোনো একটা যদি দুর্বল হয়, তাহলে সে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণতন্ত্র দুর্বল হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। তাই আসুন আমরা সকলে সম্মিলিত চেষ্টায় বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাই।’
এর আগে প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগারের ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলাগুলোতে কমপক্ষে চার কোটি লোক জড়িত। আমাদের জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। যারা বিচার চাইতে আসেন তারা এই দেশের মালিক। তাদের কথা চিন্তা করে এই বিশ্রামাগার নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে পানি পান ও টয়লেটের সুবিধা থাকবে। বিচার চাইতে এসে যেন কাউকে এলোমোলো ঘোরাফেরা করে দুর্ভোগে পড়তে না হয় এ জন্য এই ব্যবস্থা। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি জেলায় এ বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। কাজ যাতে ঠিক মতো হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কম লাভ করে তারা যেন এ কাজ করে দেয়।’
ফরিদপুরে মামলা নিষ্পত্তির হার বেশি হওয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ফরিদপুরে ২৫ হাজার ৫৫৭ মামলা গত এক বছরে হয়েছে। এক বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০ হাজারের ওপরে মামলা। নিষ্পত্তির হার ১১৪ শতাংশ। এ ঘটনা আমাদের আশা জাগায়। এটা জেনে আমি খুশি।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওহিদুজ্জামান। পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারী। এতে অন্যদের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আকবর আলী শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারকগণ এবং ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।