বিদেশি অতিথিদের নিয়ে অন্য সময়ে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান হবে

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের অবস্থার উন্নতি হলে বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিতিতে বছরের যে কোনো সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষের’ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের পুনরায় আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে বিশেষ ব্যক্তিদের আসার কথা ছিল সেটা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। মুজিববর্ষ বছরব্যাপী চলবে। আমরা বছরের যে কোনো সময়ে বিদেশি মেহমানদের উপস্থিতিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে পূর্বঘোষিত যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি সেটি করবো; তার আয়োজনের জন্য আমাদের সামনে যথেষ্ট সময় আছে।’
এটার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সংযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘বিশিষ্ট মেহমানরা কেউ-ই অনুষ্ঠানে আসা স্থগিত করেননি। কাজেই পরিস্থিতির কারণে মানবিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা কর্মসূচির যে পুনর্বিন্যাস করেছেন একে অন্যভাবে উপাস্থাপন করার জন্য অনেকে চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে রাজনীতি আনতে চাচ্ছেন। তাদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী, এখানে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাচ্ছেন এবং বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা যেটা আমরা সেটাই অনুসরণ করে চলছি।’
আগামী ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে ‘মুজিববর্ষের’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোর প্রস্তুতি ছিল। জমকালো এই অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের উপস্থিত থাকার সূচিও ছিল চূড়ান্ত।
কিন্তু গত রোববার দেশে তিনজন করোনাভাইরাসের রোগী সনাক্ত হওয়ার পর পরই মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠান কাটছাঁট করার ঘোষণা আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই জটিল মুহূর্তে জনসমাগম এড়িয়ে চলার এবং এ নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সচেতন থাকার।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর গতকাল সোমবার রাতে দলের প্রথম কার্যনির্বাহী সভার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই মূলত এই সংবাদ সম্মেলনে আসেন ওবায়দুল কাদের।
তখন মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনোভাবেই যাতে জনগণের কোনো ক্ষতি না হয়। সে কারণে মানবিক বিষয় বিবেচনা করে কর্মসূচি নতুন করে সাজিয়েছেন তিনি।’
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সতর্কতার বিষয় রয়েছে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। সব স্থলবন্দরেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিধি মনে চলতে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই রোগে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা তিন ভাগ লোক মারা যায়। সুতরাং এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে যারা সংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বাড়াবে তাদের বিরুদ্ধে আরো জোরদার অভিযানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, স্যানিটাইজার, সাবান, মজুদ করে অবৈধ মুনাফা অর্জনের চেষ্টা করছে। এবং এসব পণ্যের মূল্য কয়েকগুন বাড়িয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এরইমধ্যে এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু করেছে এবং তা আরো জোরদার করা হবে।’
গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, কোনো কোনো মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে মানুষকে আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, এটা নিয়ে আতঙ্কিত বা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিতি ছিলেন।