বিশ্ব বাঘ দিবস : বাঘের বংশ বিস্তারের পরিকল্পনা
আজ ২৯ জুলাই, বিশ্ব বাঘ দিবস। বিশ্বজুড়ে বাঘ বিপন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে রাশিয়ায় প্রথমবারের মতো বাঘ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ১২ বছরে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণে পরিণত করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দেশে বাঘ সংরক্ষণে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। বাংলাদেশেও একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। বন বিভাগের সঙ্গে ওয়াইল্ড টিম এই কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করে থাকে।
বাঘ জীববৈচিত্র্য ও খাদ্যশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার একটি অংশ। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্রের (ইকোলজি) খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে রয়েছে বাঘ। বলা হয়, বাঘ সুন্দরবনের পাহারাদার। আবার এটিও ঠিক যে, বাংলাদেশের মধ্যে শুধু এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলেই বাঘ বসবাস করে। সম্পদ আহরণের জন্য মানুষ এই বনাঞ্চলে প্রবেশ করে। তখন কখনও কখনও বাঘের আক্রমণে মানুষের মৃত্যু হয়। গত তিন মাসে এ রকম পাঁচটি অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে বাঘ লোকালয়ে এসে কখনও মানুষকে আক্রমণ করে না। আগে লোকালয়ে বাঘ আসার ঘটনা শোনা যেত। সেই সময়ে মানুষের হাতে বাঘের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এখন বাঘ লোকালয়ে আসে না।
এ ছাড়া বাঘ সম্পর্কে মানুষের ধারণাও পাল্টেছে। বাঘের গুরুত্ব ও টিকিয়ে রাখার বিষয়ে ওয়াইল্ড টিম একটি স্বেচ্ছাসেবী দল গড়ে তুলেছে, যারা শুধু বাঘ নয়, যে কোনো বন্যপ্রাণী লোকালয়ে এলে তা উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেয়।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ভুটানে বাঘের সংখ্যা এরই মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। নেপাল ও ভারতেও বাঘের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। এ ছাড়া সেসব দেশে সুরক্ষা কাঠামোও জোরদার হয়েছে। অন্যদিকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১১৪টি।
এদিকে, আগামী বছর ২০২২ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বাঘ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাঘ জরিপসহ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে চলমান আইনটি সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ হতে বাঘের বংশবিস্তার, সংরক্ষণ, বাঘের খাদ্য হরিণ, শূকর বৃদ্ধি, বাঘের আবাসস্থল উন্নত করা, বয়স্ক বাঘের গলায় রেডিও জিপিএস স্থাপন এবং প্রাণীর মাধ্যমে মানবদেহে ভাইরাস ছড়ায় কি না—এসব পরীক্ষার জন্যে একটি প্রকল্প পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে করোনাকালের গুরুত্ব বিবেচনায় তা অনুমোদিত না হওয়ায় সেটি সামান্য রদবদল করে আবারও অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসেইন জানান, বাঘ রক্ষা মানে তো শুধু বাঘ নয়, বাঘের আবাসস্থল, খাদ্যপ্রাপ্তি, বিচরণস্থল সবকিছু রক্ষা করার বিষয়। এ কারণে সার্বিক দিক বিবেচনা করে সরকারের অর্থায়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান করোনা বাস্তবতায় তা অনুমোদিত হয়নি। সেটি আবারও একটু পরিবর্তন করে জমা দেওয়া হবে।
সুন্দরবনে বাঘের বর্তমান আবাসস্থল ২৩ ভাগ। বন বিভাগ এটিকে বাড়িয়ে ৫২ ভাগ করার পরিকল্পনা করেছে। বাঘের বংশ বিস্তারের জন্য বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলে সেজে ফাঁদ পেতে হরিণ ও বাঘ শিকারিদের তালিকা করে সচেতন করার কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে সুন্দরবনে বাঘ জরিপ করা হয়।