বিয়েতে রাজি না হওয়ায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে হত্যা, ৪ জনের যাবজ্জীবন
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার দায়ে চার আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকার পক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পিপি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়৷ একপর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামিরা। ঘটনাটি আদালতে প্রমাণ হয়েছে। এতে আদালত আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।’
পিপি জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘রায়ের সময় আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনোয়ার হোসেন কইলা ও আখি আক্তার রুমা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হুমায়ুন ও বাহার পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে বাহার শুরু থেকেই পলাতক, আর হুমায়ুন জামিনে গিয়ে পলাতক রয়েছেন।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রফিক উল্যাহ বলেন, ‘মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। ঘটনার প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি বাদীপক্ষ। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
দণ্ডপ্রাপ্ত কইলা, রুমা ও হুমায়ুন কবিরের বাড়ি রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকায়। আর মো. বাহারের বাড়ি রায়পুর উপজেলার বামমী ইউনিয়নের বামনী গ্রামে।
আদালত সূত্র জানায়, নিহত রোজিনা আক্তার দেনায়েতপুর এলাকার বয়াতি বাড়ির মৃত সফিক মিয়ার মেয়ে ও হযরত খাদিজাতুল কোবরা নুরানী মহিলা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। পরীক্ষা শেষে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকেলে সে বাসায় ফিরছিল। এ সময় সাবেক পৌরসভা কার্যালয় ভবনের সামনের সড়কে কথিত প্রেমিক আনোয়ার হোসেন কইলার সহযোগী রুমা অপেক্ষা করছিলেন। একপর্যায়ে ফুসলিয়ে আখি তাকে বাগানের দিকে নিয়ে যায়। কইলার কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে রুমা এ সহযোগিতা করে। সেখানে কইলাসহ আরও তিন সহযোগী ছিল। একপর্যায়ে কইলা ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। সে প্রত্যখ্যান করলে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে অন্যদের সহযোগিতায় গাছের সঙ্গে গলার ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাগানে মরদেহ ফেলে রাখে। পরদিন দুপুরে স্থানীয়রা মরদেহটি দেখে পুলিশকে খবর দেয়। তার পরিবারের লোকজন এসে মরদেহটি শনাক্ত করে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা মামলা করেন।
সূত্র জানায়, হত্যার ঘটনায় ঘটনার ছয় দিন পর ১৭ ডিসেম্বর পশ্চিম কেরোয়া এলাকা থেকে রুমা ও হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় তারা লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট মো. দাঊদ হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৬ সালের ১৮ জুন পুলিশ আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।