বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের জন্মবার্ষিকী পালিত

Looks like you've blocked notifications!
নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতিস্তম্ভে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ছবি : এনটিভি

নড়াইলে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখের ৮৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ বুধবার নূর মোহাম্মদ নগরের বাড়িতে কোরআনখানি হয়েছে। দুপুরে শোভাযাত্রা সহকারে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে  পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি জাদুঘরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার এস এ মতিন, মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে মোস্তফা কামাল প্রমুখ

নূর মোহাম্মদ শেখের দ্বিতীয় স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা (৭৯) বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১৮ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এর আগে ১৯৯০ সালে প্রথম স্ত্রী তোতা বিবি মারা যান। বর্তমানে ছেলে গোলাম মোস্তফা কামাল ও তিন মেয়ে নড়াইল এবং যশোরে বসবাস করছেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬, যশোর জেলার অন্তর্গত নড়াইল মহকুমার মহিষখোলা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আমানত শেখ, মায়ের নাম জেন্নাতুন নেসা। শৈশবেই বাবা-মা হারিয়ে অনেকটা সংসার বিরাগী জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন। সংসারের প্রতি মন ফিরিয়ে আনতে অবিভাবকরা তাঁকে ১৯৫২ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করান। স্ত্রী তোতা বিবির বয়স তখন ১২ বছর। ১৯৫৪ সালের শেষভাগে জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান হাসিনা খাতুন। সংসারে অভাবের ছোঁয়া লাগায় দিশেহারা হয়ে যোগ দেন মুজাহিদ বাহিনীতে। ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন ইপিআরে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। কিছুদিন পরই আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধে বিয়ে করেন মৃত শ্যালকের স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসাকে। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে দিনাজপুর সেক্টরে যুদ্ধরত অবস্থায় আহত হন। যুদ্ধ শেষে তিনি 'তকমা-ই-জং' 'সিতারা-ই-হারব' মেডেল লাভ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে তিনি ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর পেয়ে অসুস্থ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গায় ইপিআরের ৪নং উইংয়ে নিজ কোম্পানির সাথে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সেক্টর গঠন হলে তাদের উপর ন্যস্ত হয় ৮নং সেক্টরের দায়িত্ব। তিনি নিয়োগ পান বয়রা সাব-সেক্টরে। এই সাব-সেক্টরের অধীনে গোয়ালহাটি, ছুটিপুর ঘাট, ছুটিপুর সেনাক্যাম্প, বরনী আক্রমণে অংশ নেন এবং বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বরনীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার জীবন রক্ষা করেন। ১৯৭১ সালের  ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুর প্রতিরক্ষা অবস্থানের সামনে স্ট্যান্ডিং পেট্রলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণ নস্যাৎ করে দেন প্রায় একাই। আহত অবস্থায় অধীনস্থ সৈনিকদের নিরাপদে পেছনে পাঠিয়ে দেন এবং শত্রুর মোকাবিলা অব্যাহত রাখার সময় শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তী সময়ে সহযোদ্ধারা তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী যুদ্ধক্ষেত্র কাশীপুরে সমাহিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' খেতাবে ভূষিত করে।