ব্যাংক চেক ডিজ-অনার মামলা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্ট। ছবি : সংগৃহীত

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনার মামলা করতে পারবে না বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। 

আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল বাকী।

গত ২৮ নভেম্বর এখন থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনার মামলা করতে পারবে না, হাইকোর্টের এ সংক্রান্ত রায় স্থগিত না করে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

এর আগে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনার মামলা করতে পারবে না বিষয়ে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

গত ২৩ নভেম্বর চেক ডিজ-অনার মামলা সংক্রান্ত রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আদায়ের জন্য শুধুমাত্র ২০০৩ সালের অর্থঋণ আইনের বর্ণিত উপায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করতে পারবে। পাশাপাশি বর্তমানে আদালতে চলমান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়ের করা সব চেক ডিজ-অনার মামলার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও রায়ে বলা হয়। 

ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্র্যাক ব্যাংকের চেক ডিজ-অনার মামলা বাতিল করে ২৩ নভেম্বর বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। পরে ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী সাইফুজ্জামান তুহিন বলেন, ‘ঋণ আদায়ের জন্য চেক ডিজঅনারের অভিযোগ তুলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না। এ সংক্রান্ত সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আদালত। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে। রায়ে আদালত বলেছেন, ব্যাংক ঋণের বিপরীতে যে চেক নিচ্ছে সেটা জামানত। বিনিময়যোগ্য দলিল নয়। জামানত হিসেবে রাখা সেই চেক দিয়ে চেক ডিজ-অনার মামলা করা যাবে না।’

আদালত বলেন, ‘ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ একটি চুক্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যাংকের কিছু দুর্নীতিবাজ, অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে, তাদের হিডেন এজেন্ডা বাস্তবায়নে চেকের অপব্যবহার করে মামলা করে থাকে। তাদের ব্যবহার দাদন ব্যবসায়ীদের মতো।’ 

আদালত আরও বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক নেওয়াটাই বেআইনি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজ করে আসছে।’ রায়ে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘আজ থেকে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি চেক ডিজ-অনার মামলা করে তাহলে আদালত তা সরাসরি খারিজ করে দেবেন। একইসঙ্গে তাদের ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতে পাঠিয়ে দেবেন।’ 

আদালত বলেন, ‘ব্যাংক হওয়ার কথা ছিল গরিবের বন্ধু, কিন্তু তা না হয়ে ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গরিবের রক্ত চুষছে। এটা হতে পারে না। যারা হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছে ব্যাংক তাদের ঋণ মওকুফ করার কথা শুনি, কিন্তু কোনো গরিবের ঋণ মওফুফ করার কথা কোনোদিন শুনিনি। নীলকর চাষিদের মতো, দাদন ব্যবসায়ীদের মতো যেনতেন ঋণ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য। ঋণ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আইনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মামলা দায়ের না করে চেক ডিজ-অনার মামলা করছে। এ কারণে আমাদের ক্রিমিনাল সিস্টেম প্রায় অকার্যকর হয়ে গেছে। তাই এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবে, অন্য কোনো আইনে নয়।’

ওই দিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি হাইকোর্টের রায়ের আলোকে নির্দেশনা জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে নির্দেশ দেন আদালত। এ ছাড়াও সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশনা দেন।