ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার আইনজগতে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে : হাইকোর্ট

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্ট। এনটিভির ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের আইনজগতের ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালত কক্ষে অশালীন আচরণের ঘটনায় তিন আইনজীবী হাইকোর্টের তলবে হাজির হলে আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আইনজীবীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল ও অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা।

শুনানির শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘মাই লর্ড, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের পথে এগিয়েছে। আজ থেকে সব কোর্ট চলছে। আমাদের আরো কিছু কাজ আছে। সবকিছুর সমাধান হবে, আমাদের এক মাস সময় দিন।’

তখন আদালত বলেন, ‘কিছুই (ডেভেলপমেন্ট) হয়নি। হাইকোর্টে এটার তারিখের আগে ওখানে একটু নাড়াচাড়া করেন। আমরা বুঝি। দিন যাচ্ছে আর টাইম নষ্ট করছেন। এটার (কনসিকোয়েন্স ফেস) পরিণতি ভোগ করতে হবে। আপনারা (রুলের) জবাব দিলে দেন, না দিলে না দেন। আমরা আমাদের মতো আগাবো। একটা কোর্টকে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছেন। সমস্ত কিছু আমরা দেখছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার (আইনজীবী সমিতি) বাংলাদেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সমস্ত আইনজীবীদের কলঙ্কিত করেছে।’

আদালত আরও বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির প্রেসিডেন্ট হোক আর সদস্য হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। বার কাউন্সিল আছে। তবে বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই করবো। প্রতিদিন আমরা খবরের কাগজে চোখ রাখি যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বারে কি হচ্ছে। আপনারা কোর্ট বর্জন করছেন করেন, কিন্তু বিচার প্রার্থীরা কোর্টে গেলে তাদের ডিস্টার্ব করা হচ্ছে, থ্রেট দেওয়া হচ্ছে। আপনারা একতরফা (এক্সপার্টি) গেলে আমরাও (এক্সট্রিম) যাবো। কে বারের সভাপতি, কে বিজ্ঞ আইনজীবী তা আমরা দেখবো না। এরা বাংলাদেশে প্র্যাকটিস (আইন পেশা পরিচালনা) করার যোগ্য কি না সেটাও আমরা দেখবো।’

একপর্যায়ে হাইকোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিন আইনজীবীকে তাদের ব্যাখ্যা দিতে সময় দিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় আদালত অবমাননার রুলের শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন।

গত ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এসময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

এর আগে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচার চেয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো বিচারকের অভিযোগ বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।