ভিক্ষুক নারীকে বাড়ি ও দোকান দিল পুলিশ
পুলিশ মানেই অন্য এক দর্শন, অন্য এক ছবি। সেই দর্শন, সেই ছবি মুছে দিলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান।
আজ সোমবার দুপুর ১২টায় ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর মডেল টাউন এলাকায় ভিক্ষুক নারীকে বাড়ি ও দোকান ঘর নির্মাণ করে বুঝিয়ে দিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার।
মো. আলীমুজ্জামান অসহায় ভিক্ষুক নারীকে বাড়ি ও দোকানঘর নির্মাণ করে দিয়ে ফরিদপুরের মানুষের জন্য মানবতার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার অফিস যেকোনো অসহায় মানুষের জন্য সবসময় অবারিত, খোলা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যেকোনো মানুষ তার কাছে হাজির হতে পারবেন। মুখ খুলে কথা বলতে পারেন যেকোনো সমস্যা নিয়ে।
এর আগেও মো. আলীমুজ্জামান একজন বীরাঙ্গনাসহ বেশ কয়েকটি অসহায় পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন। করোনার প্রথম থেকে অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, মাস্ক ও স্বাস্থ্যসামগ্রী, রোজায় খাদ্য, কম্বল, প্রায় রাতে জেলার অসহায় ভবঘুরে মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে তিনি এখন ফরিদপুরে মানবতার ফেরিওয়ালা।
ফরিদপুর শহরের লক্ষ্মীপুর মডেল টাউন এলাকায় আজ দুপুরে মাহফুজা বেগম নামে ওই অসহায় নারীর হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেন পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমনরঞ্জন সরকার, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. গাফফার হোসেন, পুলিশ লাইনসের রিজার্ভ অফিসার আনোয়ার হোসেনসহ পুলিশ কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। চাবি হস্তান্তর শেষে বাড়ির আঙিনায় পুলিশ সুপার দুটি আমের চারা রোপণ করেন।
জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে এই বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, টিউবওয়েল, পাকা ফ্লোরের বারান্দাসহ দোচালা দুটি কক্ষ করে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বাড়ির সঙ্গেই একটি দোকানঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, যাতে এই নারী ভিক্ষা না করে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।
সুবিধাভুগী ওই নারী মাহফুজা বেগম বাড়ি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার এই খুশি প্রকাশ করার মতো না। সারা জীবন আমি এসপি স্যারের জন্য দোয়া করব।
মাহফুজা বেগম জানান, তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে। এখন একমাত্র পঙ্গু ছেলে কোনো কাজ করতে পারে না। মানুষের কাছে ৫০ থেকে ১০০ চেয়ে নিয়ে দুই বেলা আহারের ব্যবস্থা হতো। মাথা গোঁজার কোনো ঠাই ছিল না তার, পরের বাড়িতে থাকতেন।
মাহফুজা বেগম আরও বলেন, এসপি স্যার অনেককে ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন শুনে তার কাছে গিয়ে জানালে তিনি আমাকে বাড়ি ও দোকানঘর নির্মাণ করে দেন।
পুলিশ সুপার আলীমুজ্জামান বলেন, পুলিশ জনগণ নিয়ে কাজ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অনেক মানবিক কাজ করে থাকে। অতীতেও করেছে, যা হয়তো এখন আরও বেশি দৃশ্যমান। আমরা জনগণের খুব পাশে যেতে চাই। সেই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশের নিজস্ব অর্থায়নে দরিদ্র ও অসহায় এই নারীকে বাড়ি, দোকানঘর নির্মাণ করে দেওয়া।