ভুলে ভুক্তভোগীর বাবার কাছে কল, ছিনতাইয়ের দায়ে ধরা ঢাবির দুই শিক্ষার্থী

Looks like you've blocked notifications!
ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী

জুবায়ের আহমেদ। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেদিন। পরে অগ্নিশিখা থেকে একটু দূরে যান এগিয়ে। তখন সন্ধ্যা পৌনে ৭টা। এমন সময় হাজির হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। যুবায়ের কাছে টাকাসহ কী কী আছে জানতে চান তারা।

জুবায়ের জানতে চান, তার কাছে কেন এসব জানতে চাওয়া হচ্ছে? শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। সে সময় ওই তিন শিক্ষার্থী জুবায়েরকে ভয় দেখান। তাদের একজন জুবায়েরকে বলেন, ‘অন্ধকারে কী করতে আসছিস? খারাপ কাজ করতে আসছিস? তোর বাবাকে জানিয়ে দেব। দে, তোর বাবার মোবাইল নম্বর দে।’ একপর্যায়ে জুবায়ের নম্বর দিতে বাধ্য হন।

মুঠোফোন নম্বরটি নিজের ফোনে লিখে নেন আবদুল্লাহ আল মুনতাসীর নামে একজন। তিনি ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক ছাত্রলীগের বর্তমান সহসভাপতি। তখন জুবায়ের আহমেদের বাবার কাছে ভুলে কল দিয়ে বসেন মুনতাসীর। বিষয়টি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে কলটি কেটেও তিনি। কিন্তু, ততক্ষণে কল চলে যায় জুবায়েরের বাবার কাছে। কল কেটে গেলে তিনি কলব্যাকও করেন। ফের কল কেটে দেন মুনতাসীর।

এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক নুর উদ্দীন আহমেদ, মুনতাসীর এবং আরও এক শিক্ষার্থী মিলে জুবায়েরের কাছ থাকা ১৫ হাজার টাকা ছিনতাই করেন। সে সময় জুবায়ের হাঁকডাকে কিছু মানুষ জড়ো হন সেখানে। তখন জুবায়েরের দিকে পাঁচ হাজার টাকা ছুড়ে দিয়ে বাকি ১০ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান ছিনতাইকারী তিনজন।

ঘটনাটি ঘটে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা। আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে বিষয়টি এই প্রতিবেদককে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন।

জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, জুবায়ের আহমেদ পল্টন সিটি হার্ট মার্কেটের রংধনু ফ্যাশন নামের একটি দোকানে কাজ করেন। তিনি একটি পুরানো মোটরসাইকেল কিনতে চেয়েছিলেন। চিন্তা ছিল, ভাড়ায় চালানো। জুবায়েরের এক বন্ধু তাকে বলেছিলেন কিছু টাকা ম্যানেজ করতে। মোটরসাইকেল কিনতে বাকি যে টাকার প্রয়োজন হবে, ওই বন্ধু দিতে চেয়েছিলেন। সেজন্য জুবায়ের গতকাল সন্ধ্যায় তার জোগাড় করা ১৫ হাজার টাকা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তার বন্ধু আসার আগেই ঘটে যায় ছিনতাইয়ের ঘটনা।

এরপর জুবায়ের কল করেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ। সেখান থেকে শাহবাগ থানায় বিষয়টি জানানো হয়। পরে ঘটনাস্থলে যান শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত শোনেন। তখন জুবায়ের পুলিশকে তার বাবার কাছে কল যাওয়ার বিষয়টি জানান।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘পরে আমি জুবায়েরের বাবার সঙ্গে কথা বলি। ওই নম্বরটি নিই। সেটি ছিল মুনতাসীরের। ওই নম্বর ট্রাকিং করে তার অবস্থান নিশ্চিত হই। পরে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে নুর উদ্দিন ও মুনতাসীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুবায়েরও তাদের শনাক্ত করেন। আবার গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তারা ছিনতাইয়ের ১০ হাজার টাকাও ফেরত দেন।’

জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, ‘বাকি যে আরেকজন ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাকে এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। গ্রেপ্তার দুজন ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।’

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।