ভেসে আসছে সুন্দরবনের হরিণ, ইয়াসের ক্ষতি নিরূপণে কমিটি 

Looks like you've blocked notifications!
জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটে সুন্দরবন থেকে একে একে লোকালয়ে ভেসে আসছে মৃত হরিণ। ছবি : এনটিভি

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটে সুন্দরবন থেকে একে একে লোকালয়ে ভেসে এসেছে চারটি মৃত হরিণ। আরও বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খুলনা বন বিভাগ।

গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য, দুবলার চর থেকে দুটি ও শরণখোলা উপজেলার সাউথখালি ইউনিয়নের তাফালবাড়ি গ্রাম থেকে একটি ও রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রাম থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

এ ছাড়া বাগেরহাটের পাশের জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে দুটি জীবিত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পানিতে ডুবে সুন্দরবনের আরও বন্যপ্রাণি মারা যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ। জোয়ারের পানির তোড় ও ঝড়ো হাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের জেটি, জলযান (ট্রলার), গোলঘর, ওয়াচ টাওয়ার, স্টাফ ব্যারাক ও রেস্ট হাউজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া ছয়টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে বনবিভাগ জানিয়েছে। বন্যপ্রাণির মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে এরই মধ্যে খুলনা বন অফিস চার সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করছে। এই দল এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে বাগেরহাট অফিস এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি।

শরণখোলা উপজেলা রাজেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান ফরাজি বলেন, ‘গতকাল বুধবার বিকেলে রাজেশ্বর গ্রামের মোড় এলাকায় একটি মৃত হরিণ ভেসে আসে। আমরা এলাকাবাসী সেটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগকে খবর দেই। হরিণটির শরীরে কোনো ক্ষতচিহ্ন ছিল না। জোয়ারের পানিতে ডুবেই হরিণটির মৃত্যু হয়েছে।’

সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা দুলাল খান বলেন, ‘জোয়ারে এত পানি মুই দেহি নাই, কোনো দিন। হ্যার পিন্নে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী ভাইসা গেছে। হরিণ মইরা ভাইসা মোগো গ্রামে চইলা আইতেছে। মোরা বন বিভাগে খবর দেতে আছি, হ্যারা আইয়া লইয়া যাইতেছে।’

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও জোয়ারের পানির প্রভাবে পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে তলিয়ে গেছে। এর প্রভাবে বনের অভ্যন্তরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এ ছাড়া সকাল থেকে আমি বনের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। বনের বিভিন্ন উঁচু স্থানে আমি বন্য শূকর ও হরিণ আশ্রয় নিতে দেখেছি। প্রজনন কেন্দ্রে কুমিরের শেডগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনে এত পানি আমি আগে কখনো দেখিনি। এমন অবস্থায় সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্রায় পাঁচ-ছয় ফুট পানি উঠে যায় সুন্দরবনে। এর ফলে পানিতে ডুবে বন্যপ্রাণি মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি মৃত ও দুটি জীবিত হরিণ আমরা উদ্ধার করেছি। পানির তোড় ও ঝড়ো হাওয়ায় পূর্ব সুন্দরবনের ১৯টি জেটি, ছয়টি জলযান (ট্রলার) দুটি গোলঘর, একটি ওয়াচ টাওয়ার, চারটি স্টাফ ব্যারাক ও একটি রেস্ট হাউস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ছয়টি অফিসের টিনের চালা উড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণের জন্য রেঞ্জে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।’