ভৈরবে পাঁচ গুণীজনকে এনটিভি দর্শক ফোরামের সম্মাননা

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাঁচ গুণীজনকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা দিয়েছে এনটিভি দর্শক ফোরাম। ছবি : এনটিভি

নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাঁচ গুণীজনকে সংবর্ধনাসহ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনটিভি দর্শক ফোরাম সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের সংবর্ধিত করে।

গুণীজনরা হলেন অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত, সাংবাদিক ও সংগঠক বশীর আহমদ, সাংবাদিক ও লেখক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, শিক্ষক ও কবি মো. শরীফ হোসেন এবং লেখক, কলামিস্ট অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সংবর্ধিত ব্যক্তিদের কর্মময় জীবন ও স্মৃতিচারণমূলক লেখা নিয়ে প্রকাশিত বিশেষ ক্রোড়পত্র ‘গুণীজন’ পত্রিকা মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শকদের বিতরণ করা হয়। ক্রোড়পত্রটি সম্পাদনা করেছেন এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ও এনটিভি দর্শক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ আমিন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ফারুক। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন প্রখ্যাত লোকসাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রাহক ও গবেষক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত, ভাষাসৈনিক মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান।

এ সময় মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান বলেন, ‘গুণীজনদের কদর না করলে একটি সমাজে গুণীর জন্ম হয় না। সমাজের নানা পেশার মানুষ তাঁদের স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। তাঁদের মধ্যে যারা বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন তাঁদের সম্মানিত করা উচিত। এতে করে ওই ব্যক্তিটি যেমন উৎসাহিত হবেন, তেমনি সমাজের আরও বহু লোক তাঁর পথ অনুস্মরণ করে কৃতিত্ব অর্জন করে সম্মানিত হতে চাইবেন।’

গুণী এ মানুষ আক্ষেপ করে বলেন, ‘বর্তমান সমাজে গুণীদের কদর কমে গেছে। তাই গুণী মানুষের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। সমাজে মন্দ মানুষজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। মানুষের মধ্যে পৈশাচিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবীয় গুণাবলী ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বন্ধ্যাত্ব তৈরি হচ্ছে পারিবারিক-সামাজিক সম্পর্কগুলিতে। এনটিভি দর্শক ফোরাম আজ যে কাজটি করলো সেটি যে কতো বড় কাজ, কতো বড় দায়িত্ব সেটি যদি সমাজের দায়িত্ববানদের চোখে পড়ে থাকে, তবে তারা তাদের কাছ থেকে দীক্ষা নেওয়া উচিত।’

এনটিভি যে শুধু সংবাদ সংগ্রহই করে না, সংবাদ তৈরিও করে-এটা আবারও প্রমাণিত হলো। এনটিভির সামাজিক কর্মকাণ্ড বরাবই অব্যাহত থাকবে, এই প্রত্যাশা করে তিনি শুভ কামনা জানান।

মোবাইল ফোনের প্রতি বর্তমান প্রজন্মের আসক্তিকে তিনি ধ্বংসাত্মক বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আমি বিজ্ঞান মানব জাতির জন্য আর্শীবাদ না অভিশাপ, সেই বিতর্কে যেতে চাই না। তবে আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্র যে আমাদের সন্তানদের মননশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে, এটা সত্য। তাদের রক্ষা করতে হলে সৃজনশীলতার দিকে ধাবিত করতে হবে, বইয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে দিতে হবে। নইলে অন্ধকার এক আগামীর জন্য মানবজাতিকে অপেক্ষায় থাকতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, ‘আজকের সংবর্ধিত গুণীজনেরা ভৈরবসহ এ অঞ্চলের খুবই পরিচিত মুখ। তাঁরা দীর্ঘদিন তাঁদের পেশায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবসর জীবন যাপন করছেন। কেউ বা শিশুদের মেধা বিকাশে এখনও বাচ্চাদের বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে কাজ করছেন। আমি বিশ্বাস করি, এমন গুণীজনেরা যেসব শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন, সেখান থেকে গুণী শিক্ষার্থীরাই বেরিয়ে আসবে।’

গুণীজনদের সম্মাননা দেওয়ায় এনটিভি দর্শক ফোরামকে ধন্যবাদ জানান। এনটিভির মতো অন্য গণমাধ্যমসহ সামাজিক সংগঠনগুলো এমন মহতী উদ্যোগে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাবিদ ও লেখক-গবেষক অধ্যক্ষ আহম্মেদ আলী বলেন, ‘গুণীজনদের এই সম্মাননার আয়োজন করে এনটিভি দর্শক ফোরাম সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সমাজের গুণীজনদের গুরুত্ব দিতে হয়, সম্মান দিতে হয়। ভৈরবের আরও অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান থাকা সত্বেও এনটিভি দর্শক ফোরাম সমাজের একটি বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করল।’ এনটিভি দর্শক ফোরামের সব সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভাশীষ জানান তিনি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ফয়সাল হোসেন সৌরভ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের এই গুণীজনেরাই সমাজের আলোকবর্তিকা। তাঁদের দেখানো পথেই আমরা হাঁটি প্রতিদিন। তাঁদের কীর্তি আমাদের সমাজও রাষ্ট্রকে সমৃদ্ধ করে। ভৈরবের এই পাঁচ গুণীজনকে সম্মাননা জানিয়ে এনটিভি দর্শক ফোরাম মূলত পুরো ভৈরবকেই সম্মানিত করলো।’

এ সময় এনটিভি দর্শক ফোরামে আরও সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করেন তিনি।

এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ও এনটিভি দর্শক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পাঁচ গুণীজন অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত, অসুস্থ সাংবাদিক বশীর আহমদের মেয়ে ডা. নাফিসা নায়ার, সাংবাদিক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, শিক্ষাবিদ মো. শরীফ হোসেন, অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ ও দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদ মো. সুমন মোল্লা।

আলোচনা শেষে সংবর্ধিত গুণীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। এ সময় প্রধান অতিথিকে শাল পরিয়ে দিয়ে সম্মান জানান অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা ও অনুষ্ঠানের সভাপতি সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ফারুক।