ভৈরবে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশে আয়, যাচ্ছে বিদেশে

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাছের আঁশ পরিষ্কার করছে শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ বিক্রির আয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন বেশ কিছু মানুষ। তারা শহরের পলতাকান্দা এলাকার দেশের অন্যতম বৃহৎ মাছের নৈশকালীন আড়ৎ, সকালের চন্ডিবেরস্থ পঙ্কুমিয়ার বাজার, গাছতলাঘাট বাজার, রানীর বাজার ও সন্ধ্যার ভৈরবপুরস্থ মনামরা বাজার থেকে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ কুড়িয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করে থাকেন। পরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সেই শুকনো মাছের আঁশ ঢাকা, হবিগঞ্জ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে কিনে থাকেন।

প্রতি কেজি এই আঁশ বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এই মাছের আঁশ বিক্রি করে তারা মাসে উপার্জন করছেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ সংগ্রহ করেই তাদের জীবন-জীবিকা চলছে অনায়াসে। অন্যদিকে এই মাছের আঁশ ক্রয়ের পর চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন ব্যবসায়ীরা।

বিদেশে এই আঁশ কোলাজেন ও জিলেটিন তৈরি, ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যালস সামগ্রী, প্রসাধন সামগ্রী ও ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। জানা যায়, দেশের বৃহত্তম হাওরাঞ্চল সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের প্রবেশমুখ খ্যাত বন্দরশহর ভৈরবে দেশের অন্যতম বৃহৎ মাছের আড়ৎ অবস্থিত। এখানে প্রতিরাতে হাওরাঞ্চলের কোটি কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও শহরের চন্ডিবেরস্থ পঙ্কুমিয়ার বাজার, গাছতলাঘাট বাজার, রানীর বাজার ও ভৈরবপুরস্থ মনামরা সেতু সংলগ্ন মাছের বাজারগুলোতে স্থানীয় নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরের বিপুল পরিমাণ মাছ বিক্রি হয়ে থাকে।

ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা এই মাছের ক্রেতাদের একটা বড় অংশ পছন্দের মাছ কেনার পর আঁশ পরিষ্কারসহ প্রসেসিং করে নিয়ে যান। ওই বাজারগুলোতে এক শ্রেণির শ্রমিক কেজিতে ১৫-২০ টাকা মজুরির বিনিময়ে মাছ প্রসেসিং করে থাকেন। শ্রমিকরা মাছ প্রসেসিংয়ের সময় মাছের আঁশগুলো ফেলে দেয়। তখন মাছের আঁশ কুড়ানিরা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে শুকিয়ে বস্তাবন্দি করে রাখে।

আঁশ কুড়ানি নাছির মিয়া, জাহাঙ্গীর, আকলিমা বেগম, জনি মিয়া জানান, তাদের সংগ্রহ করা আঁশ ঢাকা, হবিগঞ্জ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যায়। প্রতি কেজি এই আঁশ প্রকার ভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে তারা বিক্রি করে থাকেন। এতে করে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয় তাদের।

এ বিষয়ে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. লতিফুর রহমান বলেন, ‘এই অঞ্চল মাছের উদ্বৃত্ত অঞ্চল। এখানকার প্রাকৃতিক জলাশয়সহ বিভিন্ন পুকুর প্রচুর পরিমাণ মাছের যোগান দেয় যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে। এইসব মাছের একটা অংশ ক্রেতারা নিজেরা কিনে প্রসেসিং করে নিয়ে যান। সেই প্রসেস করা মাছের আঁশ সংগ্রহ করে এক শ্রেণির মানুষ তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এই আঁশ কিনে বিদেশে রপ্তানি করছেন। এতে করে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।’