ভয়ের কারণ ভারতীয় ধরন
‘ডেলটা ধরন’ বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কারণে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সীমান্ত অব্যবস্থাপনা ও জেলাভিত্তিক লকডাউনের শিখিলতার কারণে ডেলটা ধরন ঢাকাসহ দ্রুত অন্যান্য জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এমন অবস্থায় ভারতের মতো মৃত্যু ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ বয়স্কদের আগে টিকার আওতায় আনার পরামর্শ তাদের। এবং সেটা যত দ্রুত করা যাবে ততই মঙ্গল বলে অভিমত দিয়েছেন তাঁরা।
সারা বিশ্বে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য যেসব ধরনকে দায়ী করা হচ্ছে তার অনেকগুলোই পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। তবে মে মাস থেকে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ‘ডেলটা ধরন’ (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট), যা ভাইরাসটির অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি সংক্রামক ও মারাত্বক।
উচ্চ সংক্রমণ হারের কারণে সীমান্তবর্তী অনেক জেলায় দেওয়া হয় বিশেষ লকডাউন। তবে গত কয়েক দিন ধরে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নেই এমন এলাকায়ও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার আরও উদ্বেগজনক তথ্য বেরিয়ে এসেছে আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায়। তাদের গবেষণা বলছে, ঢাকায় নতুন করে আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশের মধ্যেই পাওয়া গেছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত জেলাগুলোতে সংক্রমণ ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপ কার্যকর না হওয়ায় তা অন্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘এখন উচিত হচ্ছে, যেসব জায়গায় গুচ্ছ সংক্রমণ বেশি হচ্ছে সেখানে নিয়ন্ত্রণ আনা। ঢাকার চাইতে বেশি দরকার ছিল ওই জেলাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা। সেখান থেকে যেন সংক্রমণটা না আসে। সেই জায়গায় স্থানীয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় অনেক দুর্বলতা থেকে গেছে। বুঝলাম, সীমান্তে অনেক ছিদ্র রয়ে গেছে; কিন্তু আমাদের ব্যস্থাপনাতেও অনেক ছিদ্র ছিল।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পরই কেবল তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো নিয়ন্ত্রিত হয়নি। ফলে একে তৃতীয় ঢেউ বলা যায় না। প্রতিরোধ কার্যক্রম যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তাহলে কিন্তু সারা দেশে মৃত্যু এবং সংক্রমণ খুব বেড়ে যাবে। আশঙ্কা হচ্ছে, ভারতের মতো একটি বিপর্যয়কারী অবস্থা তৈরি হতে পারে।’
সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। সেই সঙ্গে টিকা কর্মসূচির রোডম্যাপও নতুন করে সাজানোর পরামর্শ তাদের।
ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘ভ্যাকসিনেশনের জন্য সুনির্দষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। আমার যদি লক্ষ্য থাকত, হার্ড ইম্যুনিটি করব, ১২ থেকে ১৩ কোটি লোককে টিকা দেওয়া হবে- সেই ধরনের আশা ছিল। বিভিন্ন জায়গা থেকে টিকা আসার কথা ছিল। এক বছরের মধ্যে সেই টিকা দেওয়া যেত।’
‘কিন্তু এখন আমাদের বাস্তবতা হচ্ছে, সেটা সম্ভব না। এখন যৌক্তিকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। সবার আগে একেবারে বয়স্কদের তাদের টিকা দিতে হবে। তারপর ক্রমান্বয়ে অন্যদের’, যোগ করেন চিকিৎসক।