মৌলভীবাজারে চা বাগানে শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত

‘মজুরি ৩০০ টাকা দিতে হবে, নইলে বুকে গুলি মারতে হবে’

Looks like you've blocked notifications!
মৌলভীবাজারে আজও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে চা বাগানের শ্রমিকরা। ছবি : এনটিভি

মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানে শ্রমিক ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। ধর্মঘটের ১৬তম দিনে অনেক বাগানে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়নি। আজ বুধবার সকাল থেকে চা বাগানগুলো নীরব থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকটি বাগানে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। অনেকে বাগানের বাইরে এসে সড়ক অবরোধ করে। আবার অনেক শ্রমিকরা চা বাগানে ফ্যাক্টরি সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করে।

জুড়ী ভ্যালীর আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা জুড়ী চৌমোহনায় আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদী পথসভা ও বিক্ষোভ মিছিল করে। সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা স্লোগান দেয়, ‘৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে, নইলে বুকে গুলি মারতে হবে।’

এ সময় আঞ্চলিক মহাসড়কসহ আশপাশের সড়কগুলোতেও যানজট লেগে যায়। চরম দুর্ভোগ পোহায় যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। অপরদিকে জুড়ীতে সরকারি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জুড়ীতে আসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। পরে চা শ্রমিকদের অবরোধের খবর পেয়ে উপজেলা সামাজিক সম্প্রীতি কমিটির সভা শেষে তিনি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় তিনি চা শ্রমিকদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, আপনারা জীবনভর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার বাগানের অনেক শ্রমিককে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাগানের শ্রমিকদের তালিকা করে প্রতিবছর পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। যা অন্য কোনো সরকার দেয়নি। আপনাদের ছেলেমেয়েরা আজ আর শুধু চা শ্রমিক নয়, তারা এখন দেশ পরিচালনায় অংশ নিচ্ছে।

কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে বক্তব্য দেওয়ার সময় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, এখানে আসার পথে গাড়িতে বসেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। আশা করি আপনাদের সমস্যার সমাধান হবে।

এ সময় শ্রমিকরা জানান, তারা তিন দিন অপেক্ষা করবেন। কিন্তু বাগানে কাজে যাবেন না। এ সময় শ্রমিকরা মন্ত্রী ও এক নেতার কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে তাদের দুঃখ ও ক্ষোভের কথা জানান। শ্রমিকরা এসময় স্লোগান দেন ‘৩০০ টাকা মজুরি দিতে হবে, নইলে বুকে গুলি মারতে হবে।’

জেলার সাধারণ চা শ্রমিকরা জানান, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কিছুতেই কাজে ফিরবেন না। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পযর্ন্ত দুই ঘণ্টা মাজদিহি এলাকায় ভৈরববাজার-কমলগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সাধারণ চা শ্রমিকরা।

বাংলাদেশ টি বোর্ডের দেওরাছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে প্রেমনগর এলাকায় এলজিইডির সড়ক অবরোধ করে। পরে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বাগান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়কের মোকামবাজারে মিছিল ও পথসভা করে।

অপরদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও চা বাগানে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে চা শ্রমিকরা। এ সময় দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ইউএনওর আশ্বাসে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ বিভিন্ন বাগানে গিয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে কাজে যোগদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম দফা ঢাকায় বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তর কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠক, পরে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তরে এবং সর্বশেষ রোববার মধ্যরাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে আটজন শ্রমিক নেতা সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ স্বাক্ষর করে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। পরে তারা সাধারণ শ্রমিকের চাপে তা প্রত্যাখ্যান করেন। উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট থেকে শ্রমিকরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ধর্মঘটে নামে। এরপর ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে চা শ্রমিকরা মানববন্ধন, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ করে ধর্মঘট পালন করছে। ১৪ ও ১৫ আগস্ট দুদিন কর্মসূচি স্থগিত থাকার পর এ পর্যন্ত পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করে আসছে চা শ্রমিকরা।