মহিলা দলের সভাপতি ও সম্পাদককে অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
নওগাঁ জেলা শাখা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি মাসরেকা বানু চৌধুরী সীমা ও সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা বেগমের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা মহিলা দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পত্নীতলা উপজেলার পরিষদের দুই বারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম বেগম শেফা।
জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটির কারও সঙ্গে কোনো পরামর্শ না করেই মিটিং, আলোচনা না করেই একক কর্তৃত্বে উপজেলাগুলোতে মহিলা দলের মনগড়া কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল বিএনপিসহ সব অঙ্গ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর তৃণমূলের সব নেতাকর্মীর মতামতের ভিত্তিত কমিটি গঠনের নিয়ম। কিন্তু বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে একের পর এক কমিটি অনুমোদন দিয়ে চলেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নওগাঁ জেলার ১৪টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে ইতোমধ্যেই মান্দা ও সাপাহার উপজেলা এবং ধামইরহাট পৌরসভা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতাদের কোনো সম্মানজনক পদে স্থান দেওয়া হয়নি। দলের ক্রান্তিকালে যেসব নেতা বিভিন্ন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন তাঁদের সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে কোনো কর্ণপাত করা হয়নি। নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তুলনামূলকভাবে দলের প্রতি কম অনুরক্তদের গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনীত করা হয়েছে। এমনকি দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন, তাঁদেরও মহিলা দলের কমিটিতে সম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছে।
মান্দা উপজেলার সাবেক এক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, দলের বিভিন্ন কার্যক্রমের ঢাকা যাওয়া এবং নেতা-নেত্রীদের উপহার দেওয়ার নাম করে তাঁর কাছ থেকে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অথচ অন্য একজনকে দামি স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে মহিলা দলের মান্দা উপজেলা কমিটিতে সম্মানজনক পদ দেওয়া হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলায় নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের কাউকেই সম্মানজনক পদ দেওয়া হয়নি। বাড়িতে বসেই এসব পকেট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় উপস্থিত নেতারা অবিলম্বে নওগাঁ জেলা মহিলা দলের সভাপতি মাসরেকা বানু চৌধুরী সীমা এবং সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খাতুনকে জেলা মিহলা দলের পদ থেকে অপসারণ করার দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি পারভিন বানু স্বপ্না, সহসভাপতি শবনম মুস্তারী কলি, সহসভাপতি সামিনা পারভীন পলি, সহসভাপতি মমতাজ বেগম, সহসভাপতি মাজেদা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিলা আকতার ফেন্সী, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আকতার, কার্যনির্বাহী সদস্য মর্জিনা বেগম, কার্যনির্বাহী সদস্য মোরশেদা পারভীনসহ বিভিন্ন পর্যাযের নেতারা।
এ ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মাসরেকা বানু চৌধুরী সীমার সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২৮ বছর পর নওগাঁ জেলা মহিলা দলের কমিটি গঠনের পর থেকে নওগাঁ জেলার ১৪টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করতে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে তৃণমূল ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কোনো পক্ষপাতিত্বহীন ভাবে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু জেলা কমিটি গঠনের পর থেকেই মহিলা দলের একাংশ কমিটির বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। তারা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও আমাকে এবং সম্পাদককে সামাজিক এবং দলীয়ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। তার বহিঃপ্রকাশ আজকের সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতি করা হয়নি।’
কেন্দ্রীয় মহিলা দলের নির্দেশনা এবং নওগাঁ জেলার তৃণমূল এবং ত্যাগী নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মাসরেকা বানু চৌধুরী সীমা।