মানিকগঞ্জে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রেস্তোরাঁ ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

Looks like you've blocked notifications!
মানিকগঞ্জ পৌর শহরের বেউথা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ‘টি অ্যান্ড ফিশ বারবিকিউ’ রেস্তোরাঁ। ছবি : এনটিভি

মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সন্ধ্যায় বেউথা এলাকায় ‘টি অ্যান্ড ফিশ বারবিকিউ’ নামের ওই রেস্তোরাঁয় এই হামলা ও লুটপাট করা হয়।

হামলা ও লুটপাটের সময় রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপককে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। হামলাকারীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশী ওরফে সুমনের ঘনিষ্ট অনুসারী বলে সংগঠন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রেস্তোরাঁর লোকজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে বেউথা এলাকায় কালিগঙ্গা নদীর দক্ষিণ পাড়ে ওই রেস্তোরাঁ গড়ে তোলেন এম এম জনি নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা। জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদকও তিনি। গতকাল রাত ৮টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক মনিরুল হক ওরফে মিম, কর্মী শামীম হোসেন ওরফে বাবু, আতিকুর রহমান, তন্ময় হোসেনসহ ছাত্রলীগের ছয়-সাতজন নেতাকর্মী মদ পান করে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে অপ্রীতিকর আচরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া তরুণীদের উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ সময় তারা খেতে যাওয়া অন্য লোকজনকে রেস্তোরাঁ থেকে বের হতে বকাঝকা করতে থাকেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিক জনি তাঁদের সংযত হতে বলেন। তাতে তাঁরা আরও উত্তেজিত হয়ে বকাঝকা করতে থাকেন এবং তাঁরা বলতে থাকেন তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। পরে তারা সেখান থেকে চলে যান।

স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, এরপর রাত ১০টার দিকে মিম, বাবু ও আতিকসহ ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী ধারালো চাপাতি ও রাম দা নিয়ে ওই রেস্তোরাঁয় ঢুকে হামলা চালান এবং ভাঙচুর চালান। তাঁরা রেস্তোরাঁর ছয়টি টিনশেড ঘর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ভাঙচুর করেন। একই সময়ে দুটি ফ্রিজ, বেশ কয়েকটি চেয়ার ও একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ সময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আসিফ হোসেনকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করেন। এতে তাঁর দুই হাত গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। রেস্তোরাঁর মালিক এম এম জনি বলেন, মদ পান করে রেস্তোরাঁয় এসে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করতে বাধা দিলে, হামলাকারীরা বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের সভাপতি সুমনের লোকজন।’

মালিক জনি জানান, তিনি তাৎক্ষণিক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান। এরপর রাত ১০টার দিকে ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১২ নেতাকর্মী রেস্তোরাঁয় ঢুকে তাণ্ডব চালান। এ সময় হামলাকারীরা রেস্তোরাঁ থেকে ২৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যান বলেও জানান তিনি। এ ঘটনায় তাঁর ছয় লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে তিনি থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা মনিরুল হকের মুঠোফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত কোরাইশীর মুঠোফোনে কল করা হলে তিনিও কল ধরেননি। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও অপরাধমূলক। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকার বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আজ সকালে তিনি নিজেও ওই রেস্তোরাঁয় যান। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।