মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে যা বলল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
যুক্তরাষ্ট্র র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কয়েকজন বতর্মান ও সাবেক কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আজ শনিবার পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে তাঁর কার্যালয়ে তলব করে ঢাকার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র সচিব মোমেনের কার্যালয়ে এলে তিনি বাংলাদেশের অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান যে, মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই একতরফাভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান যে, আগে থেকে কোনো ধরনের ইঙ্গিত ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ ‘সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাটি’ আরোপের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক আলাপসহ সক্রিয় আলোচনার প্রয়োজন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কিছু বিপথগামী ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে কোনো আইনশৃঙ্খলা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞার জারি করা ঠিক নয়।
এ সময় মোমেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এমন একটি সরকারি সংস্থাকে ‘অবমূল্যায়ন’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটি জঙ্গিবাদ, মাদকপাচার ও অন্যান্য জঘন্য ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখসারিতে রয়েছে, ‘এই অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানকে মার্কিন প্রশাসনও ধারাবাহিকভাবে প্রাধান্য দিয়ে আসছে।’ তিনি আরও বলেন, অধিকন্তু, যে সুনির্দিষ্ট ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে সম্পর্কে এর আগেই বিভিন্ন সময়ে যথাযথ বিচার ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তথ্যসহ কেবল মার্কিন প্রশাসনই নয়, বরং জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তটি প্রকৃত ঘটনার পরিবর্তে অপ্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের ঘটনাগুলোর কোনো নিশ্চিত সম্পর্ক নেই।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটি জাতিসংঘ অভিহিত ‘জাতিগত নিধন’ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বর্ণিত গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত দেশগুলোর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ অথবা বিপথগামিতা কঠোর নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে।
মোমেনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সব ইউনিফর্মধারী বাহিনী তাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অন্যায় আচরণের অভিযোগ তদন্তে আইনি ও প্রশাসনিক পদ্ধতির অনুসরণ করে এবং র্যাব এর ব্যতিক্রম নয়।’
পররাষ্ট্র সচিব সংলাপ, যোগাযোগ ও সহযোগিতার পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি আগামী বছরে বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের কথা তুলে ধরেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে শুনেন এবং ওয়াশিংটন ডিসিকে তা অবহিত করবেন বলেও আশ্বস্ত করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তিনি (মিলার) বলেন যে, দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বহুমুখী সম্পর্ক আলোচনা ও উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে আগামী দিনগুলোতে মার্কিন সরকার আরও গভীরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।’
পরে রাজধানীতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ও ‘বস্তুনিষ্ঠ নয়’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের কাছ থেকে আরও বস্তুনিষ্ঠ পরিপক্ক পদক্ষেপ আশা করছি।’