মা-বাবার আশা আর হাদিসুরের স্বপ্ন কেড়ে নিল যুদ্ধ

Looks like you've blocked notifications!
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রকেট হামলায় নিহত বাংলাদেশি নাবিক হাদিসুর রহমানের মায়ের আর্তনাদ। ছবি : এনটিভি

বড় স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছিলেন মা-বাবা। স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। চাকরিও পেয়েছিলেন মেধাবী সন্তান হাদিসুর রহমান আরিফ। কথা ছিল দেশে এলেই এবার ছেলেকে বিয়ে করাবেন। এজন্য তুলেছেন নতুন ঘর। কিন্তু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এলোমেলো করে দিল সবকিছু। যুদ্ধবিমানের হামলায় সব স্বপ্ন মুছে, না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার হাদিসুর।

চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন হাদিসুর রহমান। গত বছর ডিসেম্বরের ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ নামের একটি বেসরকারি পণ্যবাহী জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পেশায় শিক্ষক বাবা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার ও মা এরপর থেকে কিছুটা হলেও সুখের মুখ দেখতে শুরু করেন। ছেলেকে ঘিরে আঁকতে থাকেন স্বপ্ন। আছে আরও তিন ছেলে-মেয়ে। ভাইয়ের চোখে দেখা গল্প শুনে তাঁরা বোনেন স্বপ্ন। পড়ালেখা শিখে ছোট ভাই তারেক হাদিসুরের মতো বড় হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সব স্বপ্ন এখন ভিজে উঠেছে স্বজনদের চোখের জলে।

রকেট হামলায় নিহত হাদিসুরের মৃত্যুর সংবাদে গ্রামবাসীও যেন স্তব্ধ। তাঁরা ভিড় করছেন নিহতের বাসায়। অন্তত মরদেহটি দেখবেন, এ প্রত্যাশায় অপেক্ষায় রয়েছেন বাবা আবদুর রাজ্জাক। বোনের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। পুরোনো স্মৃতি বলছেন, আর মাতম করছেন মা। তাঁরা নিহত হাদিসুরের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ছোট ভাই তারেক আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘ভাই আমার ফ্যামিলির একমাত্র সম্বল ছিল। জমিজমা বন্ধক রেখে কত কষ্ট করে ভাইয়াকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছেন বাবা-মা। ভাই আমাদের দুজনকে পড়াবে বলেছেন। অনেক কষ্ট করে লালনপালন করা আমাদের বাবা মায়ের একটু সুখ হবে। এখন সুখের সময়ে আসার সময় আমার ভাইকে আল্লাহ নিয়ে গেল।’

হাদিসুরের বড় বোনের স্বামী আল আমিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি—তাঁর মরদেহ যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। আমরা যেন তাঁকে দাফন করতে পারি। তাঁর বাবা-মা যেন তাঁকে দেখতে পারে।’

রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছ জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘‌যিনি মারা গেছেন, তিনি আমাদের সম্পদ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘নিহতের বিষয়টি জানার পরপরই শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার জন্য জেলা প্রশাসক মহদয় আমাকে এখানে পাঠিয়েছেন। আমি এরই মধ্যে তাঁদের সার্বিক পরিস্থিতি জেলা প্রশাসক মহদয়কে জানিয়েছি। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন।’

মরদেহ কবে নাগাদ আসতে পারে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আমরা নিহতের মরদেহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’

মা-বাবাসহ ছয় সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন হাদিসুর। তাঁর পরিবারকে সহযোগিতার প্রশ্নে ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক স্যার বলেছেন, এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেটি পৌঁছে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিহতের পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে আছে।’