মুন্সীগঞ্জে যুবদলনেতা শাওনের বাড়িতে শোকের মাতম

Looks like you've blocked notifications!
আট মাসের সন্তান কোলে নিয়ে স্বামী হারানোর বেদনায় কাতর মুন্সীগঞ্জের যুবদলনেতা শাওনের স্ত্রী সাদিয়া। ছবি : এনটিভি

যুবদলনেতা শহীদুল ইসলাম শাওনের (২৬) বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত শাওন গতকাল বৃহস্পতিবার মারা যাওয়ার পর থেকে স্তব্ধ মুন্সীগঞ্জের মুরমা গ্রাম।

আজ শুক্রবার সকালে সদর উপজলোর মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকায় গিয়ে এমনই শোকাচ্ছন্ন পরিবেশের দেখা গেছে। স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন স্ত্রী সাদিয়া আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছেন মা লিপি আক্তার। বসতঘরের এক কোণে অঝোরে কেঁদে চলেছেন সাদিয়া। কোলে আট মাসের শিশু সন্তান সাহাদ।

স্বামী হারানোর বেদনায় কাতর সাদিয়া বলেন, ‘আমি বাবার বাড়িতে ছিলাম। গত সোমবার সেখানে গিয়েছিল শাওন। বলেছিল, দু-একদিন পরই আমাকে নিয়ে আসবে। এজন্য বাজার-সদাই করবে। তাই কয়েকদিন মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যাবে। কিন্তু, শাওন তো আমাকে নিতে এলো না। আমি আর আমার সন্তানই এখন চলে এলাম ওর বাড়িতে। আমি শাওনকে হত্যার বিচার চাই।’

মা লিপি আক্তার বলেন, ‘চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল শাওন। অল্প বয়সে আমার ছেলেটা বিয়ে করে। সংসারের হালও ধরে। বুধবার বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় বলেছিল, ঘুরতে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে। আমার ছেলে আর বাড়ি ফিরে এলো না। আমার ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলল। আমার আট মাস বয়সের নাতি সাহাদ তার বাবাকে চেনার আগেই হারাল।’

প্রতিবেশীরা জানান, শাওন বরাবরই বিএনপির যেকোনো সভা-সমাবেশে যেত। ছোটবেলা থেকেই বিএনপিকে ভালোবাসে। ২০২১ সালে ভালোবেসে বিয়ে করে শাওন। পাশের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়ার সাদিয়াকে বিয়ে করেন তিনি।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজলোর মিরকাদিম পৌরসভার মুরমা এলাকায় নিহত যুবদলনেতা শাওনের বাড়িতে শোকাচ্ছন্ন পরিবেশ। ছবি : এনটিভি

শাওনের ছোট ভাই সোহান ভূঁইয়া জানান, তার বড় ভাই শাওন বাবার সঙ্গে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বুধবার বিএনপির সমাবেশে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁর মাথায় গুলি করে। এতে তার ভাই তখনই জ্ঞান হারান। তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ছাত্রলীগ এবং পুলিশের লোকজন তাঁর ভাইকে চিকিৎসা করাতে দেননি। তারা শাওনকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চাইলে সেখানেও তাদের আটকে দেন। 

পরে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাওনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তার ভাই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, গত বুধবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ, সাংবাদিক ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ অন্তত ৫০ জন আহত। গুরুতর আহত অবস্থায় যুবদলনেতা শহীদুল ইসলাম শাওন, জাহাঙ্গীরসহ তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।