মোরশেদ হত্যা মামলায় মোহাম্মদ আলীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্ট। ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন বাতিল করে তাঁকে সাত দিনের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন।

একইসঙ্গে দুই নম্বর আসামিকে ২২ দেখিয়ে জামিন নেওয়ার জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে পৃথক পৃথক প্রতিবেদন এক মাসের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

আদালতে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমী।

এর আগে কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে আলোচিত মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ ওরফে মোহাম্মদ (৪৫) নথি জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করেছেন।

জানা যায়, গত ২৩ জুন হাইকোর্টে আসামি মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদের জামিন চেয়ে অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা আনসারী আবেদন করেন। হাইকোর্টের জামিন আবেদনে মামলার এফআইআরের সার্টিফাইড কপি জমা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়। মূলত আসামি মোহাম্মদ মামলার ২ নম্বর আসামি।

গত ৩০ জুন বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার শুনানি শেষে ওই আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।

আইনজীবী নূরুল হুদা আনসারী বলেন, ‘আমার আইন পেশার এত বছরে কখনো এমনটি হয়নি। আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশের জামিন করাতে সাহাবুদ্দিন নামে তাঁর এক আত্মীয় আমাকে নথিপত্র দেন। এই আসামি যে মামলার দুই নম্বর আসামি, তা আমি জানতাম না। সম্প্রতি জানতে পেরে মামলা তুলে নিতে এবং ওই আসামিকে আটকের নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করি।’

গত ১৩ জুলাই নথি জালিয়াতি করে ওই আসামি কারাগার থেকে বের হয়ে যাওয়ার খবরে কক্সবাজারে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি সম্পর্কে জেনে ১৪ জুলাই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানিয়ে চিঠি দেন।

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার বাদীপক্ষ আদালতকে লিখিতভাবে অবহিত করেন—মামলার দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ এবং এজাহার বহির্ভূত আসামি নুরুল হকসহ পাঁচ আসামির নামে গত ৩১ মে দায়েরকৃত জামিনের দরখাস্ত শুনানি শেষে নামঞ্জুর হয়েছে।

কিন্তু, এ আদেশের প্রকৃত জাবেদা নকল হাইকোর্টে দাখিল না করে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশের পক্ষে আদালতের আদেশ জালিয়াতি করে তথাকথিত সৃজিতা জাবেদা নকল হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করা হয়েছে। সৃজিত জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আদালতের নামঞ্জুরের আদেশের বক্তব্য বাদ দিয়ে জাল জাবেদা নকলে ভিন্নরূপ বক্তব্য লেখা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল এজাহারের জাল জাবেদা নকলে এজাহারনামীয় দুই নম্বর আসামিকে ২২ নম্বর আসামি হিসেবে এবং তার ছেলে ২২ নম্বর আসামি মো. ইয়াছিনকে (১৮) দুই নম্বর আসামি দেখানো হয়েছে।

এর আগে শিশু বিবেচনায় ২২ নম্বর আসামি মো. ইয়াছিন ১৪ বছরের শিশু দাবি করে আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল ইফতারের আগে রোজাদার মোরশেদ আলীকে জনসম্মুখে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় মোরশেদ আলী ইফতার পর্যন্ত প্রাণে না মারার আকুতি জানালেও মন গলেনি ঘাতকদের। পরে ৯ এপ্রিল এ ঘটনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই জাহেদ আলী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০ আসামি রয়েছে।