মানবতাবিরোধী অপরাধ

মৌলভীবাজারের তিন জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে আসামিপক্ষ

Looks like you've blocked notifications!

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার আব্দুল আজিজ হাবলুসহ তিন জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে আসামিপক্ষ।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেছেন, ‘রায়ে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা উচ্চআদালতে আপিল করব।’

এর আগে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলামসহ তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ বৃহস্পতিবার সকালে রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যেরা হলেন—বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম।

গত ১২ এপ্রিল মামলাটি সিএভি (রায়ের জন্য অপেক্ষমান) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। এক মাসের বেশি অপেক্ষায় থাকার পর আজ রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন আদালত।

রায়ে ২৪০ পৃষ্ঠার মধ্যে সারসংক্ষেপ অংশ পাঠ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম। এরপর রায় পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার এবং সর্বশেষ দণ্ডসহ মূল রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম।

রায় ঘোষণার পরই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তিন আসামি হলেন—আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান ও আব্দুল মতিন। এর মধ্যে আব্দুল মতিন পলাতক।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর তিন জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্ত সমাপ্ত হয়। ওই বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১ মার্চ মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানা পুলিশ আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই ও আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পরের দিন ২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। তবে, আব্দুল মতিনকে আর ধরা যায়নি।

২০১৬ সালের নভেম্বরে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে। ২০১৮ সালের ১৫ মে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল বিচার শুরুর আদেশ দেন।

তিন জনের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ

প্রথম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৯শে মে আসামিরা মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করেন। তিন দিন বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতনের পর জুরি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাসসহ মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করেন। শ্রীনিবাস দাস কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যান এবং দুদিন পর বাড়ি ফিরে আসেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ দিকে, আসামিরা বড়লেখা থানার বিওসি কেছরিগুল গ্রাম থেকে সাফিয়া খাতুন ও আবদুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে ধর্ষণ করেন। পরে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প ও বড়লেখা সিও অফিসে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়েও সাফিয়া খাতুনকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে উদ্ধার করেন।

তৃতীয় অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করে বাড়ির মালামাল লুটপাট করেন। রাজাকারেরা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন করেন। ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে তাঁরা মুক্তি পান।

চতুর্থ অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মস্তকিন কমান্ডারের বাড়িতে হামলা করেন। মস্তকিনকেমস্তকিনকে না পেয়ে তাঁর ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করেন তাঁরা। নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যায়। আসামিরা মস্তকিন ও মতছিন আলীর বাড়ির মালামাল লুট করে তিনটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেন।

পঞ্চম অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর আসামিরা বড়লেখা থানার ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্যে বাড়িতে হামলা করেন তাঁরা। সেখান থেকে আসামিরা মনির আলী ও তাঁর স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। ক্যাম্পে আসামিরা আফিয়া বেগমকে ধর্ষণ করেন। হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর বাড়ির মালামালও লুটপাট করা হয়।