ময়মনসিংহের দুর্ঘটনায় চালকের ছিল না লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসও মেয়াদোত্তীর্ণ : র‍্যাব

Looks like you've blocked notifications!
গ্রেপ্তার ট্রাকচালক রাজু আহমেদ সিপন। ছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহে ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে বাবা-মাসহ এক সন্তানের নির্মম মৃত্যু ও অলৌকিকভাবে শিশু ভূমিষ্ঠের ঘটনায় ঘাতক ট্রাকচালককে গ্রেপ্তারের পর আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের দাবি, ২০১৬ সালের পর থেকে চালক রাজু আহমেদ সিপনের ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স। ট্রাকের ফিটনেস সার্টিফিকেটও ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া টানা কয়েকদিন ট্রাক চালানোর কারণে দুর্ঘটনার আগে ক্লান্তও ছিলেন তিনি। এদিকে, রাজুর দাবি—ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে নিহত পরিবারের কাউকে দেখতে পাননি তিনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ মঙ্গলবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, ট্রাকচালক রাজু আহমেদ সিপনকে গতকাল সোমবার দিনগত রাতে ঢাকার সাভার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই নিহত হন জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রত্না বেগম (২৬)। এ ছাড়া তার তিন বছর বয়সি মেয়ে সানজিদা আক্তারকে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যায়।

রত্না বেগমের ওপর দিয়ে ট্রাক চলে যাওয়ার পর তাঁর গর্ভে থাকা কন্যা সন্তান অলৌকিকভাবে ভূমিষ্ঠ হয়। পরে ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে শিশুটিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। নিহতের ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলমের বাবা বাদী হয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানায় একটি মামলা করেন।

রাজু আহমেদ সিপনের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন আরও জানান, রাজু গত ১১ জুলাই থেকে একটানা মালামাল পরিবহণ করে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনি একবার রাজশাহী থেকে আম নিয়ে কিশোরগঞ্জের তারাইলে মালামাল আনলোড করেন এবং আবারও রাজশাহী ফিরে আসেন। পরে গত ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গাড়ির মালিকের আম বোঝাই করে এবং পরে রাজশাহীর নৌহাটা থেকে আরেক দফায় আলু বোঝাই করে কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের এক ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রাত ১২টার দিকে রওনা দেন। পথে তিনি হালকা বিরতি নিয়ে দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত একটানা গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন এবং ট্রাকটি কিশোরগঞ্জে যাওয়ার পথে ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের কাছে পৌঁছালে রাস্তা পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে চাপা দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুর্ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ট্রাকটি থামান। তখন সুযোগ বুঝে রাজু ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়েন। পরবর্তী সময়ে বাস থেকে তিনি ময়মনসিংহ বাইপাসে নামেন এবং সেখান থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে প্রথমে মুক্তাগাছা এবং পরে অপর একটি বাসে করে তিনি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় পৌঁছান। সেখান থেকে রাজু তার পরিচিত বিভিন্ন ট্রাক চালকের ট্রাকে উঠে আত্মগোপনে থাকেন। গতকাল এমন একটি ট্রাক সাভারে পৌঁছালে সেখান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজু জানান, ছয় থেকে সাত মাস আগে থেকে তিনি শতকরা ১০ শতাংশ কমিশনে বর্তমান ট্রাকটি চালিয়ে আসছিলেন। ট্রাকে করে সবসময় কাঁচামাল পরিবহণ করা হতো। গাড়িটির বর্তমানে ট্যাক্স টোকেন এবং ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ উত্তীর্ণ। গাড়িটির ধারণ ক্ষমতা সাত টন হলেও দুর্ঘটনার সময় গাড়িটির ওজন ১৩ দশমিক পাঁচ টন ছিল বলে জানা যায়।

ভারী যানবাহন চালানোর জন্য কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। আগে তাঁর মধ্যম সারির গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল, যা ২০১৬ সালে হারিয়ে যায়। এর আগে রাজু ২০০২ সালে যশোরের এক ট্রাক ড্রাইভারের সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হন। ওই দুর্ঘটনায় তাঁর বাঁ পা মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার ফলে তিনি প্রায় ছয় বছর গাড়ি চালাননি। এখনও তাঁর ওই পায়ে সমস্যা রয়েছে।