যশোরে জমে উঠেছে ফুলের বেচাকেনা, ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : বাসসে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে জমে ওঠেছে ফুলের বেচাকেনা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ বাজারে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। গত দুই বছর করোনাকালে ফুল বিক্রি কম হলেও চলতি বছর থেকে ফুলের বেচাকেনা বেড়েছে বলেও জানান তিনি। 

বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইন দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ফুল উৎপাদন ও বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষি, পাইকারি ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাজধানী ঢাকা, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ফুলক্রেতারা গদখালিতে এসে ফুল কিনছেন।
সারা বছর ফুলচাষিরা ফুল বিক্রি করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসব। এ ছাড়া বাংলা নববর্ষেও ফুলের জমজমাট বেচাকেনা হয়ে থাকে।

কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গদখালি ও পানিসারা এলাকায় সাড়ে ছয় হাজারের বেশি কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, রডস্টিক, গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। 

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার তিন উপজেলায় ফুল চাষ হয়ে থাকে। এ জেলায় মোট ৬৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ৬৩০ হেক্টর জমিতে। 

ঝিকরগাছায় ফুলচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, হাড়িয়া, নীলকণ্ঠ নগর, চাওরা, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, চাঁদপুর, বাইশা, পাটুয়াপাড়া, নারানজালি গ্রামসহ প্রায় ৫০ থেকে ৫৫টি গ্রামে ফুল চাষ হয়ে থাকে। 

এ ছাড়া শার্শা উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে এক হেক্টরের সামান্য বেশি জমিতে। সদর উপজেলায় প্রায়  ৯ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। 

দেশের ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে। গদখালি বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখানকার ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

গদখালী ফুলবাজার সূত্রে জানা গেছে, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮ থেকে ১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৭ থেকে ৮ টাকা, গ্যাডিওলাস ফুল রং ভেদে ১০ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১২ থেকে ১৪ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৪ থেকে ৫ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি হাবিবুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ফুলের বাজারমূল্য ভালো থাকায় ফুলচাষিরা খুশি।

গদখালি বাজারের ফুলের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই ফুলের বাজারদর বেশ ভালো। ফলে ফুলচাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এ বাজার থেকে গত দুদিনে ছয় কোটি টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি হয়েছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭০ থেকে ৭২ প্রজাতির ফুলচাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারন, মাগুরা, নির্বাসখোলা ও শিমুলিয়া ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এ ছয়টি ইউনিয়নের সাড়ে ছয় হাজারের বেশি চাষি ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। 

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ বছর বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ৭০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, এ জেলায় ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে টিউলিপ ফুলসহ বিভিন্ন ফুলের প্রদর্শনী, উদ্যোক্তা ও ফুলচাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। ফুলচাষিদের ভারতসহ বিদেশে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।