যাত্রা ছাড়াই রথ উৎসব

Looks like you've blocked notifications!

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশ, চারদিকে নতুন আবহাওয়া। এমন পরিস্থিতির সাক্ষী আগে কখনো হয়নি জগন্নাথ মহাপ্রভুর রথযাত্রা। আজ মঙ্গলবার উদযাপিত হচ্ছে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।

এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রবর্তক, নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌরনিতাই আশ্রমের আয়োজনে বিভাগীয় ইসকনের উদ্যোগে মন্দির চত্বরে ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে।

প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে নানা উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। এজন্য এক মাস আগে থেকেই নেওয়া হতো প্রস্তুতি। শ্রী জগন্নাথ দেব, বোন সুভদ্রা রাণী ও ভাই বলরামকে নিয়ে পথ পরিক্রমায় ব্যবহৃত রথ সংস্কার বা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে এবার সেই ব্যস্ততা নেই। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আয়োজন করা হয়েছে রথযাত্রা উৎসব।

চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম আঠারশ খ্রিস্টাব্দের পর রথযাত্রা উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। শহরের নন্দনকাননে রথের পুকুরপাড় এলাকায় আষাঢ়ের দ্বিতীয়া তিথিতে বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের রথ ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে রথগুলো এসে জমা হতো, বসত মেলা। পুকুরে পুণ্যস্নান করতেন ভক্তরা। সব রথ পুকুর পাড়ে রাখা হতো বলে স্থানটির নামকরণ করা হয় রথের পুকুরপাড়। একাদশী তিথিতে প্রত্যাবর্তন বা ফিরতি রথের দিন পর্যন্ত রথগুলো সেখানেই থাকত।

কালের পরিক্রমায় সেই রথের পুকুরপাড় এখন ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন আর দোকানপাট। ফলে বিভিন্ন মন্দিরের রথগুলো পরিক্রমা শেষে আবারও ফিরিয়ে নেওয়া হয় মন্দিরে। এ ছাড়া তুলসীধামে আয়োজন করা হয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। সুদৃশ্য রথে চড়িয়ে ত্রিদেবতা নিয়ে পথ পরিক্রমায় বের হতেন হাজারো ভক্ত।

তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এবার রথ পরিক্রমা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তুলসীধামের আয়োজকরা। শহরে ২০০ বছরেরও প্রাচীন এই রথযাত্রায় ভক্তসমাগম না করতেই মঙ্গলবার রাজপথে মহাশোভাযাত্রাসহ রথপরিক্রমা হচ্ছে না।

তবে ধর্মীয় নিয়ম মেনে পুরোহিত মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা, বিগ্রহ নিয়ে পরিক্রমা করবেন। পাশাপাশি চলবে উপাসনা, ভোগারতি ও বিশ্ববাসীর কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী জানান, ১৯৯৮ সাল থেকে নগরে ইসকনের উদ্যোগে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শ্রীল প্রভুপাদের শিষ্য নিষ্টুলা দাস ব্রহ্মচারী ও চট্টগ্রাম ইসকনের অন্যতম রূপকার শ্রীপাদ শ্রীহরি দাস অধিকারী রথযাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন। নগরীর জে এম সেন হলে বাঁশের তৈরি রথে মাঝখানে জগন্নাথ, একপাশে বড়ভাই বলরাম ও মাঝে বোন সুভদ্রা মহারাণীকে বসিয়ে রথ পরিক্রমা অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর প্রবর্তক মন্দির থেকে ২০০৩ সালে বৃহৎ পরিসরে তিনটি সুদৃশ্য রথ নিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। প্রতিবছর রথযাত্রায় ১০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি থাকতো। বরেণ্য অতিথিরা আসতেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার এসব আয়োজন হচ্ছে না।

ভক্তরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্দিরেই বিগ্রহ দর্শন করবেন। এ ছাড়া মন্দির প্রাঙ্গণে জগন্নাথ দেবের পূজা, সব জীবের জন্য মঙ্গল কামনা, হোম যজ্ঞানুষ্ঠান, ভজনগীতি, প্রার্থনা, জগন্নাথ লীলা মাধুরী বর্ণন ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হবে। যা জুম অ্যাপের মাধ্যমে মন্দির থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌরনিতাই আশ্রমের আয়োজনে বিভাগীয় ইসকনের উদ্যোগে গত চার বছর ধরে আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রথযাত্রা উৎসব। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে অধিকাংশ থানা এলাকার মন্দির কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে প্রতিবছর রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও এ বছর তা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

নন্দনকানন শ্রী শ্রী রাধামাধব মন্দিরের সেবায়েত মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী জানান, করোনার কারণে বাইরে জগন্নাথ দেবের মহাশোভাযাত্রা হচ্ছে না। তবে মন্দিরে জগন্নাথ দেবের পূজাসহ নানা অনুষ্ঠান চলবে। এ ছাড়া মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা ধর্মসভায় মিলিত হবেন কৃষ্ণসেবকরা। এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আগামী ১ জুলাই একই নিয়মে উল্টো রথযাত্রাও অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক জানান, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিজেরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, এবার মন্দির প্রাঙ্গণে জগন্নাথ দেবের যত আচার অনুষ্ঠান আছে, তা শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে করা হবে। একইসঙ্গে রথ টানা সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই জনসমাগমের কারণে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত নির্দেশনা যেন উপেক্ষিত না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট রথযাত্রা উৎসব পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সনাতন ধর্মের ভক্তদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নগরীতে সব মন্দিরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জগন্নাথ দেবের পূজা-অর্চনা বিধিনিষেধ মেনে করার জন্য বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে।