যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছি : মির্জা ফখরুল
বামপন্থি রাজনৈতিক দল গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার সকালে গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর হাতিরপুল রোজভিউ প্লাজায় গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত আশার কথা এই যে, আমরা এই আলোচনার মধ্যে অনেকগুলো বিষয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা সকলেই অবগত রয়েছেন- আমরা বরাবরই এই কথাগুলো বলে আসছি যে, এই সরকারকে সরাতে না পারলে, দেশে কোনো পরিবর্তন আসবে না। জনগণের আশা-আকাঙ্খা তাদের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব কোন সরকারকে দেওয়া সেই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। সে কারণেই আমরা বারবার করে বলে আসছি-একটা গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে ভয়াবহ এই যে, ফ্যাসিবাদী একটি সরকার-যারা আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একমত হয়েছি।'
ফখরুল বলেন, বৈঠকের যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আমরা একমত হয়েছি বিষয়গুলোর মধ্যে-এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে, সংসদ বাতিল করে একটা নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, একটি নির্বাচন হবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার নাম নিয়ে মৌলিক কোনো মতভেদ দেখিনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এখানে শব্দ ও নামের ব্যাপারে মতভেদ থাকতে পারে। এটা নিয়ে সমস্যা হবে না, আমরা আলোচনার মাধ্যমে কাঙ্খিত স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হব।'
ফখরুল বলেন, ‘কতগুলো মৌলিক বিষয় এদেশের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন এ বিষয়ে উনি (জোনায়েদ সাকি) কথা বলেছেন-গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সত্যিকার অর্থে রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং মৌলিক যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমরাও বিশ্বাস করি। পরিবর্তন জরুরি। আমরা আশা করি আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে এক জায়গায় পৌঁছাতে পারব।'
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আপনারা সকলেই অবগত রয়েছেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার পরে যারা জয়ী হয়ে আসবে, সেই দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা জাতীয় কনসান্স এর ভিত্তিতে সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকার যে মৌলিক পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন সেগুলো সামনে নিয়ে আসবে, বাস্তবায়ন করবে।'
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আমরা অত্যন্ত আশাবাদী আজকের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং আমরা বিশ্বাস করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি, অতি দ্রুত সেটাকে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবো।'
‘এই সরকার যারা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে' আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা ফলপ্রসূ বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে, এটাকে জয়যুক্ত করতে সক্ষম হব এবং জনগণের একটা পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন করতে সক্ষম হব।'
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যে প্রধান দাবি- আশা করি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত হবেন যে, আমাদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কারণে যারা বন্দি আছেন, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যে ৩৫ লাখ মামলা আছে, সেগুলো প্রত্যাহার করার দাবি, তা এই আন্দোলনের মধ্যে থাকবে।'
বৈঠকে বিএনপির পক্ষে সংলাপে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে জোনায়েদ সাকির সঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইমরান জুলহাস নাঈম বাবু, দীপক রায়, মিজানুর রহমান, বাচ্চু ভুইয়াসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৪ মে বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে গত ২৭ মে বৃহত্তর আন্দোলন প্লাটফর্ম গড়তে বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার অংশ নিতে এসব বৈঠক করছে বিএনপি।