যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপি-এনপিপির ঐকমত্য
সরকার পতনে যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন করতে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। আজ রোববার সাংবাদিকদেরকে এ কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ।
এরআগে সরকার পরিবর্তনে বৃহত্তর আন্দোলনের প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, চলমান সংলাপের মধ্যে আমরা আজকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকে অত্যন্ত সন্তোষজনকভাবে বর্তমানে যে কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকার বাংলাদেশে গত এক যুগ ধরে দেশের গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে ফেলেছে এবং মানুষের অধিকারকে হরণ করে ফেলেছে- বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, ভোটাধিকার হরণ করছে, মানুষের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আমরা অগণতান্ত্রিক ও অনির্বাচিত একটি সরকারের বিরুদ্ধে জনতার ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সঙ্গে আজকে বিএনপি কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে- বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। সেই সাথে রাজনৈতিক কারণে বন্দি সকল রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশের প্রায় ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, সেই মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা একমত হয়েছি।
ফখরুল বলেন, আমরা একমত হয়েছি যে, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোন অধিকার নেই। তাদেরকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সেই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে যে ইসি গঠিত হবে- ওই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি নির্বাচন করতে হবে। আর সেই নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবে তারা সংসদ গঠন করবে এবং সেই সংসদের মধ্যে দিয়ে জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এবিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, ‘এই দাবিগুলোকে আমরা সামনে নিয়ে যুগপৎভাবে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন শুরু করবো। এব্যাপারেও আমরা একমত হয়েছি।’
ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সংলাপ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়েছে। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি এবং শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে- এবিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি আরও জানান, আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো এবং বর্তমান সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে থাকব।
সংলাপে বিএনপির পক্ষে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটি সদস্য এবং ২০ দলীয় জোট সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির পক্ষে ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সঙ্গে সংলাপে মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য আ হ ম জহির হোসেন হাকিম, নবী চৌধুরী, শরিফ মনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুজ্জামান, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মুফতি মাওলানা হাসিবুর রহমান, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ মে রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে গত ২৭ মে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন এবং ১ জুন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ২ জুন কল্যাণ পার্টি, ৭ জুন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ৮ জুন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ৯ জুন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ১২ জুন ন্যাপ ভাসানী, ১৬ জুন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ১৮ জুন বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের অংশ হিসেবে এসব বৈঠক করছে বিএনপি।