যুবলীগনেতা পৌর কাউন্সিলরকে বহিষ্কার দাবিতে সড়ক অবরোধ

Looks like you've blocked notifications!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ছবি : এনটিভি

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল আমিন সৈকতের বিচার ও বহিষ্কার দাবিতে ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। আজ সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বেলা ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত এ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে তারা।

সড়ক অবরোধের ফলে কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর থেকে ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লাহরচর পেট্রোলপাম্প পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তায় যানজটের তৈরি হয়। আটকা পড়েন হাজার হাজার যাত্রী এবং শত শত পণ্যবাহী পরিবহণ। ফলে যাত্রীরা পড়েন চরম দুর্ভোগে।

খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব সার্কেল) মো. দেলোয়ার হোসেন ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বিপুল পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা আল আমিন সৈকতের বিচার ও দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মুর্হুমুহু স্লোগান দিতে থাকে। জনতা লাঠিসোটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে এবং পাথর ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে।

পরে খবর পেয়ে ভৈরব থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সাবেক একান্ত সচিব মোল্লা সাখাওয়াত উল্লাহ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকী বিল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে যথাযথ বিচার ও বহিষ্কারের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় এলাকাবাসী। পরে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

জানাযায়, গতকাল রোববার ভৈরব থানার মাঠে পুলিশের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আল আমিন সৈকতের সঙ্গে ছোট লিমন নামের এক যুবলীগকর্মীর তর্কাতর্কি হয়। পরে সন্ধ্যায় ওই তর্কাতর্কির রেশ ধরে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের মিরারচর এলাকায় স্থানীয় যুবলীগের কাউন্সিলে আল আমিন সৈকতের সমর্থক ও লিমনের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে আল আমিন সৈকতসহ উভয়পক্ষের পাঁচ থেকে ছয়জন আহত হন। পরে সেখানে উপস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু এবং কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়ার মধ্যস্থতায় মীমাংসা হলেও এই মারামারিতে চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার ইন্ধন ছিল—এই অভিযোগে রাতে আল আমিন সৈকতের একদল সমর্থক ভৈরব বাজার টিনপট্টিতে লিটন মিয়াদের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে মালামালসহ নগদ টাকা লুট এবং একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন লিটন মিয়া। এ খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর নিজ এলাকা কালিকাপ্রসাদের উত্তেজিত শত শত জনতা আল আমিন সৈকতের বিচার ও বহিষ্কার দাবিতে ঢাকা-ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দুই ঘণ্টা অবরোধ করে করে রাখে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু বলেন, কোনো সন্ত্রাসীর ঠাঁই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নেই। আল আমিন সৈকতসহ যারা এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিচার হবে।

চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, আল আমিন সৈকতের নেতৃত্বে মিরারচরে যে মারামারির সূত্রপাত করেছিল, আমরা তাৎক্ষণিক এগিয়ে না গেলে ওরা কেউ সুস্থদেহে ফিরতে পারত না। তার পরও অহেতুক আমাদের পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল আমিন সৈকত অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান লিটন মিয়ার ইশারায় তাঁর অনুসারীরা তিনিসহ তাঁর লোকজনের উপর হামলা করেছে। তাঁদের রক্তাক্ত করেছে। তিনি এর শাস্তি চান।

ভৈরব থানার ওসি মো. মাকসুদুল আলম জানান, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনার জেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের রেশ ধরে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতাকে শান্ত রাখে। যে কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটেনি। পরে সিনিয়র নেতাদের সহযোগিতায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।