রমজান আলী মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও হতাশায় মা-বাবা

Looks like you've blocked notifications!
মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দিনাজপুর সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকার রমজান আলী। ছবি : এনটিভি

দিনাজপুরের সদর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে রমজান আলী রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অর্জন মা-বাবার জন্য যেমন আনন্দের একই সঙ্গে দুশ্চিন্তার বিষয় হয়েও দাঁড়িয়েছে।

মেডিকেলে পড়ার এত খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবেন সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা মা-বাবা। কখনও সাহায্য না চাওয়া রমজানের মা-বাবা সরকারসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কামনা করেছেন তাদের সন্তানের স্বপ্নপূরণের জন্য।

জানা গেছে, রমজান আলী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাতালিকায় এক হাজার ৫১৮তম হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান।

রমজান আলী শহরের উত্তর বালুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে ৫ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ জিপিএ ৫, চেহেলগাজী শিক্ষা নিকেতন থেকে ২০১৬ সালে জেএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিসহ জিপিএ ৫, একই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৫ এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন।

দিনাজপুর শহরের নয়নপুরে দুই হাজার টাকায় দুটি টিনশেডের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন রমজান আলীর বাবা রিয়াজুল ইসলাম ও মা নুরুফা বেগম। বড় দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। সবচেয়ে ছোট ছেলে রমজান আলীকে নিয়ে তাদের তিনজনের সংসার।

মা-বাবা ভাতের হোটেলে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মা-বাবার পরিশ্রমের পাশাপাশি রমজান আলীর নিজেরও প্রচণ্ড শ্রম ও মেধা তাকে এতদূর এনেছে।

রমজান আলীর চিকিৎসক হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল না। মায়ের অসুস্থতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও চিকিৎসা খাতে অব্যবস্থাপনা তাকে চিকিৎসক হওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর করেছে বলে জানান তিনি।

রমজানের অর্জনে গর্বিত বাবা রিয়াজুল ইসলাম ও মা নুরুফা বেগম। তারা স্বামী-স্ত্রী দিনাজপুর পঞ্চগড় মহাসড়কে রাস্তার ধারে ভাতের হোটেল চালান।

মা নুরুফা জানান, মানুষের বাড়িতে, ছাত্রাবাস ও বিভিন্ন মেসে বুয়ার কাজ করেছেন ছেলেকে পড়াশোনা করাতে। বাবাও প্রচণ্ড কষ্ট করেছেন রমজানকে এ পর্যন্ত এগিয়ে নিতে। ছেলের স্বপ্নপূরণে বাকি পথটুকু পাড় করতেও তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। তবে তিনি এও জানান, এটা তার জন্য অনেক বেশি কঠিন। তার সহযোগিতা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসীর কাছেও রমজান অতিপ্রিয়। দিনাজপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, শত বাধা বিপত্তিকে অতিক্রম করে অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে রমজান আলীর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পড়ার যোগ্যতা অর্জনের ঘটনা অদম্য বাসনা ও পরিশ্রমের ফল। করোনা মহামারির মতো কঠিন সময়ও পারেনি তাকে দমিয়ে রাখতে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া মেধাবী ছাত্র রমজান আলীর ভর্তি ও পড়ালেখায় পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির প্রতি আহ্বান জানান সাবেক কাউন্সিলর।

স্থানীয় বাসিন্দারাও তাদের গর্ব মেধাবী এই তরুণ রমজান আলীর পাশে দাঁড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।