রাঙামাটিতে সাত দফা দাবিতে নাগরিক পরিষদের ৩২ ঘণ্টা হরতাল

Looks like you've blocked notifications!
রাঙামাটি শহরের দোয়েল চত্বরে পুরাতন বাস স্টেশনে মঙ্গলবার হরতালে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। ছবি : এনটিভি অনলাইন

পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক ঠেকাতে পাহাড়ের বাঙালিভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ডাকা রাঙামাটি শহরে ৩২ ঘণ্টা হরতাল চলছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই হরতাল চলার কথা আগামীকাল বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত।

হরতালের সমর্থনে আজ সকাল থেকেই রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল ও সমাবেশ করে। হরতালের কারণে শহরে সব ধরনের যান চলাচল ও দোকান বন্ধ আছে।

মঙ্গলাবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করতে দেখা গেছে। এসময় তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। হরতাল সমর্থনে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশকে একাধিক জায়গায় বাঁধা দিতে দেখা গেছে।

যারা জরুরী কাজে বের হয়েছেন তাঁদের হেঁটে গন্তব্যস্থলে যেতে হচ্ছে। হরতালের কারণে শহরের একমাত্র গণপরিবহন অটোরিকশা (সিএনজি) বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শহরের সঙ্গে আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলার সঙ্গে উপজেলাগুলোর লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে এই পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল চলছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ভূমি কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ভূমি অধিকার কেড়ে নিতে ষড়যন্ত্র করছে। কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সমাধান হয়নি। তাই আমরা হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।’

হরতাল সমর্থনে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ। ছবি : এনটিভি অনলাইন

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালে ভূমি কমিশন সংশোধন করা হয়, সেখানে সাত সদস্যরের মধ্যে পাঁচ জনই পাহাড়ি। এতে পার্বত্য অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠি বাঙালির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি। এই আইনে আপিল করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। তাই এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালিরা ভূমি হারাবে।’

ভূমি কমিশনে সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা, বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম শুরুর আগে ভূমি জরিপ করা, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশনের ২০১৬ সালের সংশোধনী বাতিল, দেশের প্রচলিত ভূমি আইনে বিরোধ নিষ্পত্তি, কমিশনের কারণে ভূমিচ্যুতদের পার্বত্য চট্টগ্রামের খাস জমিতে পুনর্বাসন, ‘তথাকথিত’ রীতিনীতি প্রথার বদলে বিদ্যমান ভূমি আইনের প্রয়োগ ও এর আগে বন্দোবস্তি বা কবুলিয়ত পাওয়া কাউকে ভূমির মালিকানা থেকে উচ্ছেদ না করার সাত দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

এছাড়া আগামীকাল বুধবার রাঙামাটি শহরের পার্বত্য জেলা পরিষদ ভবনের নিচতলায় ভূমি কমিশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে পার্বত্য ভূমি নিষ্পত্তিবিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই সভা আহ্বান করেছিল,পাহাড়ে ভূমি বিরোধ সমস্যা

সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তি অনুসারে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশন। ২০০১ সালে পাস হওয়া পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনী হয় ২০১৬ সালে, এরপর বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় দৃশ্যত থমকে ছিল কমিশনের কাজ। আইন সংশোধনের পর কমিশন কাজ শুরু করে এবং বিরোধপূর্ণ জমির মালিকদের কাছে দরখাস্ত আহ্বান করে।

কিন্তু করোনা সংক্রমনসহ বিভিন্ন কারণে গত কয়েক বছর সক্রিয় দেখা যায়নি কমিশনকে। সম্প্রতি আবারও কাজ শুরুর প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে কমিশনকে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল বুধবার রাঙামাটিতে কমিশনের সভা আহ্বান করা হয়েছিল।