রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার : টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। সাম্প্রদায়িকতার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ পরিচালিত ‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা : জবাবদিহি ব্যবস্থার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত এসেছে। এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে এবং সবই ঘটছে একই কায়দায়। দেশের সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। আর আগের সহিংস ঘটনাগুলোর বিচার হয়নি। ন্যায়বিচার হলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এসবের বিচারে রাজনৈতিক শক্তির অনীহা দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে এসব গোষ্ঠীর আঁতাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। রাষ্ট্রধর্ম করাসহ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেসব আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা এবং আমাদের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
সাম্প্রদায়িকতা সংঘাতের উসকানিদাতাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা চরম উদ্বেগের বিষয়। যাদের হাতে পরিবর্তনের হাতিয়ার, তারা বরং এসব গোষ্ঠীর কাছে থেকে সুবিধা নিচ্ছেন। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আর হচ্ছে না।’
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবির গবেষক মোস্তফা কামাল বলেন, এটি মূলত গুণগত গবেষণা। দেশের সবকটি বিভাগের প্রতিনিধিত্ব এখানে রাখা হয়েছে। দৈবচয়নের মাধ্যমে এখানে নমুনা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে কী ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয় এবং এসবের প্রতিকারে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামোগত সুবিধা আছে, তা তারা কতটুকু ব্যবহার করতে পারে, সেসবের মূল্যায়নই ছিল এখানে বিচার্য বিষয়। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এর উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রান্তিক পরিচয়ের কারণে অনেকেই তাদের ওপর নিগ্রহের বিষয়ে অভিযোগ করতে পারেন না। গবেষণায় কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হয়। যেমন- দলিত জনগোষ্ঠীর শতভাগ নারী বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান জন্মদান করেন। নিগ্রহের ফলেই তারা খরচ অনেক বেশি হলেও বেসরকারি সেবা নেন।
করোনার সময় হিজড়া গোষ্ঠীর অনেককেই সরকারি ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী দলিত হওয়ার কারণে স্কুলে নিগ্রহের শিকার হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষকদের জানিয়েও লাভ হয়নি। দলিতদের খাবার হোটেলে বসতে না দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে গণশুনানির কথা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের জানানো হয়নি, এমন ঘটনাও ঘটেছে।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে। অনেক জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়েছে। অনেক সময় এসব বিষয়কে মেনে নিতে বলা হয়। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম।