রাজশাহীতে অনুমতি না দিলেও গণসমাবেশ মাদ্রাসা মাঠে : বিএনপি
রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য এখনও মাদ্রাসা মাঠের অনুমতি পায়নি বিএনপি। তবে অনুমতি না দিলেও সেখানেই গণসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেয়, যেকোনো মূল্যে তারা পূর্ব নির্ধারিত মাদ্রাসা মাঠেই বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে।
নগরীর ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসা মাঠে (হাজি মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) গণসমাবেশ করতে চায় বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি দাবি করে, মাদ্রাসা মাঠের প্রবেশ গেটে তালা ঝুলিয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাঠে মঞ্চ নির্মাণের জন্য ডেকোরেটরের লোকজন গেলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমাদের মাঠ দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা মাঠে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ককটেলের নামে নতুন সন্ত্রাস তৈরি করছে। নয়টি উপজেলায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার বাণিজ্য করছে। নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। গণসমাবেশে লোকজন যেন আসতে না পারে, সে কারণে সরকার অন্তরাল থেকে পরিবহণ ধর্মঘট করছে। সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে প্রশাসন দূরভিসন্ধিমূলক মঞ্চ তৈরিতে বাধা দিচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘রাজশাহী জেলার সব থানাতেই মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলাগুলোর নকল দেওয়া হচ্ছে না। আদালতে আবেদন করার পরও সেটা পাচ্ছি না। বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের নামেও মামলা হয়েছে। জেলার বাইরে যারা আছে, তাদের নামেও মামলা হচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক, আমরা এই সমাবেশ করব।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ প্রমুখ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুরে মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের ফটক খোলা। মাঠের ভেতরের শামিয়ানা টানানোর জন্য চারপাশে বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে একটি অটোরিকশায় ডেকোরেটরের লোকজনকে ফেস্টুন নিয়ে মাদ্রাসা মাঠে ঢোকার চেষ্টা করতে দেখা গেল। তবে অনুমতি নেই বলে ডেকোরেটরের লোকজনকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেয় মাঠে টহলরত পুলিশ সদস্যরা।
ওই সময় মাঠে প্রায় ১০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ সদস্য বলেন, অনুমতি না থাকায় মাঠে কাউকে মঞ্চ নির্মাণের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা ওই মাঠে কী দায়িত্ব পালন করছেন, জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বলেন, তারা আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছেন, যেন সেখানে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়।
বাঁশ দিয়ে কাঠামো কখন তৈরি করা হয়েছে জানতে চাইলে এক পুলিশ সদস্য বলেন, বেশ কয়েক দিন আগে বিএনপির লোকজন কাঠামো তৈরি করেছিল। কিন্তু এখনো তারা মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। এ জন্য এখন তাদের আর কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর পুলিশের এক উপকমিশনার বলেন, মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেবে জেলা প্রশাসন। সমাবেশ ও মাইক ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ। আমার জানা মতে, বিএনপি এখনো মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পায়নি। আর সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অন্য জায়গায় সমাবেশের দু–তিন দিন আগে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে এখনো পাঁচ দিন সময় আছে।
মাঠ ব্যবহারের অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, মাঠ ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। তিনি শুনছেন যে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। তবে হাতে হাতে কেউ তাঁর কাছে আবেদন জমা দেননি। তিনি এখনও সেটা হাতে পাননি। হয়তো ডাকফাইলে দিয়েছে। তিনি আবেদনপত্রটি খুঁজছেন। আবেদনপত্র পেলে দেখবেন বিএনপি কী শর্তে মাঠটি চেয়েছে। তারপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আর মাঠের অনুমতি পেলে পুলিশ কমিশনার সমাবেশের অনুমতি দিতে পারবেন।