লক্ষ্মীপুরে স্বামী-স্ত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

লক্ষ্মীপুরে বাসার দরজার তালা ভেঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ১০ টার দিকে সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের শাকচর গ্রাম থেকে ওই দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, মরদেহ উদ্ধার করা আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও আতরের নেছাকে (৬৫) শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ৪-৫ দিন আগে ঘটনাটি ঘটতে পারে। বাসায় জিনিসপত্র এলোমেলো থাকলেও কোনো কিছু লুট হয়েছে কি না তা বলা যাচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানায়, ছিদ্দিক আবুধাবি প্রবাসী ছিলেন। সবশেষ ১৬ বছর আগে তিনি প্রবাস জীবন শেষ করে দেশেই ছিলেন। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। তাই, ৬-৭ মাস বয়সের এক শিশুকে দত্তক নিয়ে নিজেদের সন্তানের পরিচয় দেন। তাঁর নাম রাখেন আবদুর রহিম শামছু। ২০ বছর আগে শামছুকে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাঞ্চানগর এলাকার বিয়ে করানো হয়। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে ছেলে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকছেন না। ছিদ্দিক স্ত্রীকে নিয়ে শাকচরের বাড়িতে থাকতেন।

ছিদ্দিকের ভাই আবদুল করিম, ভাতিজা জাকির হোসেন জানায়, ছয় দিন আগে আতরের নেছা তেরবেকি এলাকার দেবর কালামের বাড়ি যান। সেখান থেকে ফেরার পর থেকেই ছিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি ছিদ্দিক, তাঁর ভাই আবদুল করিম, আবুল কালামসহ স্বজনরা জনৈক ব্যক্তির কাছে তাঁদের কয়েক শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু তা রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়নি। এজন্য স্বজনরা জমি রেজিস্ট্রি করতে এনআইডি কার্ড নেওয়ার জন্য ওই বাসার সামনে আসে। প্রথমে গেটে তালাবদ্ধ দেখলেও পরে পঁচা গন্ধ পাওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে তালা ভেঙে বাসার ভেতরে দুইজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। তাঁদের গলায় কাপড় বাধা ছিল। বাসার ভেতরের সবকিছু এলোমেলো। প্রায় ৪-৫ দিন আগের ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে। একতলা বাসার ওই ছাদের দরজার তালা ভাঙ্গা রয়েছে।

শাকচর ইউপি এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) মেহেদি হাসান ফারুক বলেন, ‘মরদেহগুলো পঁচে গেছে। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। পালক পুত্রটিও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে।’

শাকচর ইউনিয়ন পরিষদেন চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘যারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তাঁদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।’

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, ‘দুজনের মরদেহ আমরা দেখতে পেয়েছি। তাঁদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।’

গতকাল সোমবার রাত ১১ টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন,  সিআইডি দল ও শাকচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।