শাহবাগের ঘটনায় প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের নামে পুলিশের মামলা

Looks like you've blocked notifications!
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছবি : এনটিভি

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশে লাঠিচার্জের পর তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বিকেলে উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা শাহবাগ থানায় এই মামলাটি করেন।

মামলায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে গুরুতর রক্তাক্ত ও হাড়ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর ২১ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে বিক্ষোভকারীদের তিনটি বাঁশ ও সাতটি কাঠের লাঠি এবং ১২টি ইটের টুকরা জব্দ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি অনিক রায়কে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জয়দীপ ভট্টাচার্য, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সোহেল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের সভাপতি তৌফিকা প্রিয়া, ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য শান্তা ও ছাত্র ফেডারেশনের জুবা মনিও এ মামলার অন্যতম আসামি। এর বাইরে কোনো সাংগঠনিক পরিচয় উল্লেখ ছাড়া আরও ১১ জন আসামি হলেন সানি আবদুল্লাহ, জাবিল আহম্মেদ জুবেন, জাওয়াদ, বাঁধন, আদনান, শাহাদাত, ইভান, অনিক, দিয়া মল্লিক, তানজিদ ও তামজিদ। 

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা বিনা অনুমতিতে বেআইনিভাবে শাহবাগ মোড়ের পাকা রাস্তার ওপর বিক্ষোভ সমাবেশ করার নামে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের রাস্তার যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করে। কিন্তু আসামিরা অনুরোধ অমান্য করে। এজাহারে থাকা আসামিরা মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে হাতে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেলসহ ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে।’

এজাহারে আরও বলা হয়, ‘বিক্ষোভকারীদের পুলিশ থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা ও ইটের টুকরা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশকে আঘাত ও মারধর করেন৷ আসামিদের লাঠির আঘাতে রমনা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার বায়েজীদুর রহমান, সহকারী কমিশনার (পেট্রোল) বাহাউদ্দীন ভুইয়া, উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল আলম আহত হন। পরে পুলিশ নিজেদের জানমাল ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷’ 

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলাটি আমরা গ্রহণ করেছি। এর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। তবে এ মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা এবং অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে গতকাল বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে ১৬ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গতকাল রোববার (৭ আগস্ট) জ্বালানি তেলের অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে পুলিশ কর্তৃক লাঠিচার্জ করে। এ ঘটনায় তাদের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।