শুধু সমুদ্রে ঝড় নয়, রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে : মির্জা ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন। ছবি : বিএনপির মিডিয়া সেল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে শুধু সমুদ্রে ঝড় নয়, রাজনীতিতেও ঝড় উঠেছে। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আপনাদের বাঁচার পথ। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।’

আজ শনিবার (১৩ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

৪৭ বছর পর জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর মূল কারণ হলো—জনগণের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা। একই কায়দা তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে করেছিল। এভাবে নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তবে, কোনো ধানাই-পানাই করে লাভ হবে না। ইনশা-আল্লাহ জনগণের বিজয় হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেয়, কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেয়। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই আবারও গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের সমাবেশ।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকে রিকশাওয়ালা সারাদিন পরিশ্রম করে বাসায় গিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন না। কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। দিন আনে দিন খায়, এমন লোকেরা আজকে অসহায়। এই সরকার শুধু দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের পকেট ভরছে। সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা কেটে বিদেশে পাচার করছে। প্রত্যেকটি খাতে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। হজের বিমান ভাড়াও তারা বাড়িয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার প্রধান তিনটি দেশ সফর করেছেন, কিন্তু কোনো অর্জন নেই। সবার সঙ্গে মিটিংয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এসেছে। কারণ, বিদেশিরা দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন দেখতে চায়। দেশে-বিদেশে এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তারা নির্বাচন করতে গেলে রুখে দেওয়া হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, ‘শেখ হাসিনা তিনটি দেশে সফরে গিয়েছিলেন, সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ভুয়া সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। এভাবে ক্ষমতা থেকে শেখ হাসিনা সরকার ভুয়া সরকারে পরিণত হয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসার চিন্তা করে না। আপনারা (সরকার) ক্ষমতায় আছেন। আবারও ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসতে চান। দেশের মানুষ জানে কীভাবে ক্ষমতা থেকে সরাতে হয়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশে বিদেশে এই সরকারকে কেউ চায় না। কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলেন। বিদেশে টাকা পাচার করার অধিকার কি সংবিধান দিয়েছে?’ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে ১৯৭১ সালের মতো আরেকটি যুদ্ধ করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আপনারা বিদায় নেন, দেশে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আগামী দিনে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে, তা জীবন বাজী রেখে পালন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিজয় শুরু হয়ে গেছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি ও বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে করে বিএনপি।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো. আমিনুল হক এবং দক্ষিণের সদস্যসচিব মো. রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, ঢাকা দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, শিরিন সুলাতানা প্রমুখ।