সংবাদ সম্মেলনে এলেন আউয়াল, দুষলেন রেজাউলকে
দুর্নীতির মামলায় সস্ত্রীক জামিন না পাওয়ার পেছনে স্থানীয় রাজনীতিতে ‘প্রতিপক্ষ’, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের ‘হাত রয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাবেক এই সংসদ সদস্য ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনের জামিন নাকচ করে দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের আদালত। এরপর তাঁর সমর্থকরা জেলা শহরে বিক্ষোভ করে এবং একপর্যায়ে জেলা জজকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। বিকেলে ভারপ্রাপ্ত জেলা জজের আদালত আউয়াল-দম্পতিকে জামিন দেন।
এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই আজ বুধবার দুপুরে পিরোজপুর জেলা শহরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ কে এম এ আউয়াল।
এ সময় সেখানে আউয়ালের স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীন, মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ও আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতির এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছিলেন আউয়াল-দম্পতি।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে এ কে এম এ আউয়াল লিখিত বক্তব্যে দুদকের মামলাগুলো ‘ভিত্তিহীন’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের বিরুদ্ধে যে তিনটি মামলা করেছে, তা মিথ্যা। এ মামলায় হাইকোর্টে আট সপ্তাহের জামিন নেই। এরপর শ ম রেজাউল করিম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করে এবং শুনানিতে জামিন নাকচ হয়ে যায়।”
পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিমকে দোষারোপ করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) দুদকের মামলায় আমি এবং আমার স্ত্রীর জামিন নামঞ্জুর করতে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুল মান্নানকে প্রভাবিত করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।’
‘বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রীর নাজিরপুরের বাসায় গোপন বৈঠক করেন বিচারক আবদুল মান্নান। পরেরদিন ১ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এস এম বেলায়েত হোসেন ও আমার আইনজীবীরা জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের সঙ্গে জামিনের বিষয়ে আলাপ করতে গেলে প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞার কথা স্বীকার করেন’, দাবি করেন আউয়াল।
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য আউয়াল প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ করেন।
আউয়াল বলেন, ‘রেজাউল করিম প্রভাব খাটিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। এ ছাড়া মন্ত্রী তাঁর ভাইদের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত করে কয়েকশ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন।’
‘এমনকি আলোচিত ক্যাসিনো সম্রাট জি কে শামীমের কাছ থেকে তিনটি কালো রঙের দামি গাড়ি উপঢৌকন নিয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দিয়েছেন প্রাণিসম্পদমন্ত্রী’, এমন দাবি করেন সাবেক এই সংসদ সদস্য।
তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আজ রাত ৯টায় এনটিভি অনলাইনের কাছে এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ কে এম এ আউয়ালের সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে। আমাকে হেয়-প্রতিপন্ন করার অংশ হিসেবেই এসব করা হচ্ছে।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় আউয়াল ও তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীনের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানের আদালত।
জামিন আবেদন নাকচের আদেশের পর পরই আদালত কক্ষে হট্টগোল শুরু হয় এবং আদালত প্রাঙ্গণ ও শহরে আউয়াল-সমর্থকরা বিক্ষোভ করে। পরে অজ্ঞাত কারণে জেলা জজ মো. আবদুল মান্নানকে স্ট্যান্ডরিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) করা হয়।
পরে ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পান যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত নাহিদ নাসরিন। তাঁর আদালতে আউয়াল দম্পতির আগের করা জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিকেল সাড়ে ৩টায় শুনানির পর আদালত তাঁদের দুই মাসের জামিন দেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর মধ্যেই আজ সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যে কথাটি সব সময় বলছি যে সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে। আউয়াল-লায়লা পারভীনের এ ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করল। এ ঘটনায় বিচার বিভাগ যে স্বাধীন নয়, সেটা আরেকবার উলঙ্গভাবে প্রমাণিত হলো।’
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি পিরোজপুরের আদালতে ঘটে যাওয়া গতকালকের ঘটনারও বর্ণনা দেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তাঁর স্ত্রী দুদকের একটি মামলায় জামিন চাইতে পিরোজপুর জেলা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। গতকালের এ ঘটনায় আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই সময় তাঁর পক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারক অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেছেন। এই অবস্থায় বারের সব আইনজীবী আদালত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেন।’
উদ্ভূত পরিস্থিতির সময় লোকজন রাস্তায় বেরিয়ে গিয়েছিল, সেটাকে কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করতেই আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ওই বিচারককে ওখান থেকে স্ট্যান্ড রিলিজ করার আদেশ দেওয়া হয় বলে জানান আনিসুল হক।