সন্তানের ‘স্বপ্ন মহলে’ স্থান হলো না শয্যাশায়ী বাবার
বার্ধক্যজনিত কারণে শয্যাশায়ী লক্ষ্মীপুরের বৃদ্ধ শফিকুল ইসলাম (৯৫)। তাঁকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে উঠানে ফেলে রাখেন পাষণ্ড ছেলেরা। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা রোডে ‘স্বপ্ন মহল’ নামের বাসার উঠানে অবহেলায় পড়ে ছিলেন তিনি।
প্রতিবেশীর মধ্যমে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ও রাজীব হোসেন এসে ওই বৃদ্ধ বাবা সফিকুলকে উদ্ধার করেন। এ সময় তাঁর ছেলেদের ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তারা। পরে অসুস্থ বাবাকে তাঁর বড় মেয়ে সুরাইয়া বেগমের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এদিকে, খবর পেয়ে বড় মেয়ে সুরাইয়া তাঁর বাবাকে নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা তিল তিল করে এ সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। বাবার ঘামঝরা উপার্জনে তিন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আমার অসুস্থ বাবাকে তারা পাষণ্ডের মতো ঘর থেকে বের করে রাস্তায় ফেলে রেখেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে শফিকুল বার্ধক্যজনিত রোগে বাসায় শয্যাশায়ী। তিনি ছাপাখানায় কাজ করতেন। দুই বছর আগে তিনি চার ছেলে ও তিন মেয়েকে সব সম্পত্তি ভাগ করে দেন। ছেলেদের মধ্যে শাহ আলম অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য, জাহাঙ্গীর আলম বিজিবি সদস্য, আলমগীর হোসেন প্রবাসী। সোহাগ নামের এক ছেলে কয়েক বছর আগে মারা যান। পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সবারই বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। অসুস্থ বাবা সফিকুল তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় ছিলেন। কিন্তু বাবার পরিচর্যা করতে অনীহা দেখিয়ে আজ সকালে বাসা থেকে বের করে অন্য ছেলে আলমগীর হোসেনের বাসা ‘স্বপ্ন মহলে’র সামনে উঠানে ফেলে রাখেন। এরপর কোনো ছেলেই অসুস্থ বাবাকে ঘরে তোলেনি। উঠানে তাকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় এক ব্যক্তি জেলা প্রশাসনে খবর দেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল ও মো. রাজীব হোসেন। তারা সফিকুলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু কেউই বাবার দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। পরে বড় মেয়েসহ স্থানীয়দের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটরা কথা বলেন। এ সময় বাবাকে নিতে ইচ্ছে প্রকাশ করায় সরকারি গাড়ি দিয়েই সফিকুলকে বড় মেয়ের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল ইকবাল বলেন, ‘অসুস্থ সফিকুলকে তাঁর কোনো ছেলেই রাখতে চায়নি। তারা শয্যাশায়ী বাবাকে বাসার বাইরে ফেলে রেখেছে। পরে তাঁকে তাঁর বড় মেয়ের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’