সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি : আপিল শুনানি পেছাল

Looks like you've blocked notifications!
হাইকোর্টের ফাইল ছবি।

সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির দিন পিছিয়ে আগামী ৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। আজ রোববার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সময় আবেদন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। গত ২৩ অক্টোবর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায় লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি না পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের রায় ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে বলা হয়। ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ স্থগিত করেছেন। এর ফলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারার কার্যকারিতা বহাল থাকবে।’

গত ২৫ আগস্ট সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধান বাতিল করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থি। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ সেদিন এ রায় ঘোষণা করেন। পরে এই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২৫ আগস্ট রায়ের পর রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেছিলেন, আদালত রায়ে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪১(১) ধারা বেআইনি, সংবিধান পরিপন্থি, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেছেন যে, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তারপরও ৪১(১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধান সম্মত নয়, এ আইনি একটি মেলাফাইড (অসৎ) উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষা দিতে এ আইনের ৪১(১) ধারা সংযোজন করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ রায়ের ফলে তাদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতির প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতকে দেখিয়েছি এই আইন করার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য, সেটা হলো- সরকারি কর্মচারীদের সাধারণ নাগরিক থেকে একটু আলাদা করে তাদের একটি বিশেষ শ্রেণি হিসেবে দেখিয়ে অনেক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। অপরাধ করলেও যেন তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তি না পায়। বিশেষ করে এই আইনের মাধ্যমে দুদকের যে স্বাধীনতা সেটা খর্ব করা হয়েছিল।’

২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে, তাকে গ্রেপ্তার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।’