‘সরকারি রাস্তায়’ বাঁশের বেড়া, পাবনায় অবরুদ্ধ শতাধিক পরিবার

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার আমিনপুর গ্রামে একটি রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ছবি : এনটিভি

পাবনার আমিনপুর গ্রামে একটি ‘সরকারি রাস্তা’ বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে—রাস্তায় বেড়া দেওয়ার মাধ্যমে চলছে সরকারি জমি দখলের পাঁয়তারা, আর এর নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্যের ভাতিজার দিকে।

এদিকে, রাস্তায় বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় বন্ধ হয়ে গেছে মানুষের চলাচল। আশপাশে বিকল্প রাস্তা না থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, আমিনপুরের একটি রাস্তায় উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে মাটির কাজ চলছে। ঠিক সেখানেই বাঁশের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৪৫ বছর ধরে ওই সব পরিবারের সদস্যেরা রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করতেন। গত বুধবার পাবনার বেড়া উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের টাকায় মাটির কাজ শুরু হয়। পরের দিন বৃহস্পতিবার হঠাৎ ওই এলাকার ইউপি সদস্যের ভাতিজা দলবল নিয়ে গিয়ে রাস্তায় বাঁশ দিয়ে বেড়া দেন।

এ সময় বসবাসরত পরিবারগুলো বাধা দিলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় শতাধিক পরিবারের সদস্যেরা বেকায়দায় পড়েছেন। এক প্রকার অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন ওই সব পরিবারের সদস্যেরা।

অবরুদ্ধরা জানান, সেখানে বসবাসরত পরিবারের সদস্যরা সবাই শান্তিপ্রিয় ও কর্মজীবী। তাঁদের অভিযোগ—যে ব্যক্তি রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তিনি প্রভাবশালী ও মাদকব্যবসায়ী। তাই প্রথমে বাধা দিলেও, পরে ভয়ে তাঁরা কিছু বলেননি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, তাঁরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করছেন। হঠাৎ করে জাতসাকিনী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য কালামের ভাতিজা রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। তাঁদের দাবি, ইউপি সদস্য কালামের ইন্ধনে তাঁর ভাতিজা এসব কাজ করছেন। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় থানা পুলিশও জানে।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় এ রাস্তার মাথায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ইটভাটা ছিল। ইট আনা-নেওয়া করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তাটি তৈরি করে। এখন সে সরকারি রাস্তা দখলের পাঁয়তারা চলছে।

বেড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শায়লা শারমিন ইতি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারি রাস্তা জেনেই উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজ করতে গেলে একজন নিজের জমি দাবি করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন।’

উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গ্রামবাসী আবেদন দিয়েছেন। আমি নিজেও জানি এবং ম্যাপও (নকশা) দেখেছি, সেখানে সরকারি রাস্তা আছে।’ জাল কাগজপত্র তৈরি করে কাজে ব্যাঘাত ঘটানো হয়ে থাকলে, তা যাচাই-বাছাই করে পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান তিনি। 

অভিযোগ প্রসঙ্গে আলহাজ মণ্ডল বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে বসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা থানায়ও অভিযোগ দিয়েছি।’ তবে তিনি বাঁশ দিয়ে বেড়া দেননি দাবি করে বলেন, ‘যাঁর জায়গা, তিনি বেড়া দিয়েছেন।’

ইউপি সদস্য কালাম মণ্ডলের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে দেখা করুন, ফোনে কোনো কথা হবে না।’ পরে তিনি বলেন, ‘ওই দিক দিয়ে ট্রাক চলাচল করতো, রাস্তা আছে কি না, আমি জানি না। আমার ভাতিজা কী করল, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। ওটা ভাতিজার ব্যাপার।’

জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, সেটা নিয়ে কাজ করছি।’

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুনেছি।’ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।