বিএনপির আনুষ্ঠানিক বাজেট প্রতিক্রিয়া

সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই এ বাজেট : মির্জা ফখরুল

Looks like you've blocked notifications!
আজ শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : এনটিভি অনলাইন

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। সুতরাং জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য বাজেট পেশ করার এখতিয়ারও তাদের নেই। এ সরকার পরিকল্পিতভাবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে, জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। একটি অনির্বাচিত সরকার কখনই জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না। সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই এ বাজেট।

আজ শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সরকার প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতেই এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে বিএনপি। এতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। সকল রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি সংগঠনের তথা জনগণের ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্থান্তর করে এবং সংসদ বাতিল করে নতুন করে গঠিত নির্বচন কমিশনের পরিচালনায় সকল দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনই এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।’

তিনি বলেন, ‘‘জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় সকল দল, মত ও পথের মানুষকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কঠোর গণআন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে আগামীদিনে যুগোপযোগী, কার্যকরী ও প্রয়োজনীয় ‘অর্থনৈতিক সংস্কার’ করে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক নিরাপত্তাভিত্তিক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ্।’’ 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আগে বলেছিলাম বর্তমান ভোটচোর গণবিরোধী সরকারের বাজেট উত্থাপনের কোনো অধিকার নেই। কেননা এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং তাদের দেওয়া বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর কিছু নেই।’

তিনি বলেন, ‘‘২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছে সেটা কোনো অর্থেই সাধারণ জনগণের বাজেট নয়। এটা স্রেফ ‘ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট’। কারণ পাচারকারীদের অর্থকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা কিংবা বিদেশে ভোগ করার বৈধতা দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও পরিষ্কার অর্থে বললে, সরকারের লুটেরা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী স্বজনদের অর্থপাচার করার সুযোগ করে দিতেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্য ব্যবহৃত চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য হ্রাসের কোনো কার্যকরী কৌশল না নিয়েই শুধু মাত্র নিজেদের বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির লক্ষ্য এই বাজেট প্রণীত হয়েছে।’’

গত ১৪ বছরে সরকার ঘনিষ্ট লোকজনই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে নিয়েছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এখন এ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার ঐ সব পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ করার ঢালাও সুযোগ করে দিল। এর আগেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবারের মতো পাচারকারীদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিক যে কোনো মানদণ্ডেই অগ্রহণযোগ্য। পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার বৈধতা দিলে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁরা হতাশ হবেন। যাঁরা সৎভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁরা কর দিতে নিরুৎসাহিত হবেন। এর ফলে পি কে হালদারের মতো বিদেশে পালিয়ে থাকা কেউ একজন যদি কর দিয়ে কালো টাকা নিয়ে আসে, তাহলে তাকে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। এতে টাকা আরও পাচার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হবে। টাকা পাচারকারীরা উৎসাহিত হবে।’

পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় ৪-৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে কীভাবে বর্তমান সরকারের সময় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা এবং রেল সংযোগের কারণে তা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকলো, জনগণ তা জানতে চায়। পদ্মা সেতু পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল সেতু। ভারত ও চীনের তুলনায় এতো দৈর্ঘের সেতুর জন্য যে পরিমাণ ব্যয় হয়েছে, সে অর্থ দিয়ে কয়েকটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণের মনোজগতে আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের আবেগময় আবহ সৃষ্টির প্রচেষ্টার আড়ালে মানুষের মন থেকে আওয়ামী লীগের বিগত ১৪ বছরের সকল পাপ, দুর্নীতি, অন্যায় ও অপকর্মের ক্ষত মুছে ফেলার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণ অতি সচেতন। প্রকৃত সত্য তাদের সবই জানা আছে। জনগণকে বেকুব ভাবার কোনো সুযোগ নেই।’

দ্রব্যমূল্যের উচ্চচাপসহ বাজেটের নানা সমস্যা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ বাজেট জনগণের জন্য নয়, এ বাজেট ডলার পাচারকারী ও অর্থ লুটেরাদের বাজেট। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট, এটি কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।’