সাঁতার না জেনেও মায়ের পরামর্শে নদীতে ঝাঁপ দেন অগ্নিদগ্ধ ফাতেমা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে গ্রামের বাড়ি বরগুনার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। ঢাকায় অবস্থানরত এক ফুফাতো বোনকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল থেকে ‘এমভি অভিযান-১০’ লঞ্চে উঠলেও বাড়ি যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি ফাতেমার। মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে চলন্ত লঞ্চে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। মায়ের পরামর্শে আগুনে পুড়ে মরার চেয়ে নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাঁতার না জানা ফাতেমা আক্তার। এতে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। কিন্তু, ততক্ষণে অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।
জবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা বর্তমানে ঝালকাঠির সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার পরিকল্পনা করছেন ভুক্তভোগীর মা-বাবা। ফাতেমার মা-বাবা দুজনেই জবির কর্মচারী।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা প্রিয়া বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাতেমা বরগুনা যাওয়ার পথে লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ, হাসপাতালে ভর্তি, সবার নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি। সে আমাদের গেটম্যান পান্না মামার মেয়ে। সে এখন বরগুনা মেডিকেলে ভর্তি আছে। কাল ঢাকা আসবে, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হবে। যেকোনো প্রয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাশে থাকবেন।’
ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফাতেমা এবং তার বোন ভয় পেয়ে মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে। মায়ের পরামর্শ অনুযায়ী ফাতেমা সাঁতার না জেনেও নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরে তাঁর ফুফাতো বোনের সহায়তায় কোনোভাবে নদীর তীরে এসে শেষ রক্ষা হয়েছে। দুজনের চেষ্টায় প্রাণে বেঁচে যায় তারা।’
আগুনে ফাতেমার হাত-পায়ের অনেকাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তার বাবা। দীর্ঘক্ষণ নদীর পানিতে থাকায় অধিক ঠান্ডার কারণে শ্বাসকষ্টেও ভুগছেন। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফাতেমাকে আজ রোববার সকালে জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার কথা রয়েছে।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফাতেমার পরিবারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক আমি যোগাযোগ করে তার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পাশে থাকবে।’