সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে প্রস্তুতি চলছে : জ্বালানি উপদেষ্টা
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্যও প্রস্তুতি চলছে। তবে, সাফল্য কতটা পাওয়া যাবে এবং পরিবর্তিত বিশ্বপ্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিকে আকর্ষণ করা যাবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তিনি আরও বলেছেন, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রায় সব খাতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশের করণীয় বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির (বিইএস) আয়োজনে ‘প্রেজেন্ট এনার্জি ক্রাইসিস ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রায় সব খাতেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যা এই অস্থিতিশীল ও সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তাই কীভাবে বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠা যায় এবং ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, আমরা সে চেষ্টাই করছি।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর মোহাম্মদ তামিম এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) এস এম জাকির হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের এনার্জি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ, বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান করিম, সামিট গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান এবং ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি কনসালট্যান্ট প্রকৌশলী খন্দকার আব্দুস সালেক (সুফি)।
বিইএসয়ের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিইএসয়ের সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ।
আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যের সারাংশ উপস্থাপন করেন ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিইএসয়ের সদস্য মেজর জেনারেল মইন উদ্দিন (অব.), মডারেটর ছিলেন বিইএসয়ের সহসভাপতি ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।
আলোচনায় জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর ডিমান্ড সাইড লোড ব্যবস্থাপনা ও জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে গ্যাসের সিস্টেম লস ১০ শতাংশ থেকে দুই শতাংশে নামিয়ে এনে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ মিলিয়ন গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব, যা স্পটবাজার থেকে এলএনজি কেনার বিকল্প হবে, শিল্পে আরও বেশি গ্যাস সরবরাহ করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পেট্রোবাংলার পরিকল্পনামাফিক ২০২৫ সালের মধ্যে ৬১৮ এমএমসিএফডি গ্যাস যুক্ত করার পরিকল্পনা অতি আশাবাদী। ফলে, এই সময়কালে গ্যাস সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি জায়গায় মধ্য মেয়াদে সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়। বলা হয়, এতে তিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত সোলার বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির আওতায় দেশের তেল, গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান এবং উত্তোলনের পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।