সাফল্যের ১৯ বছরে এনটিভি
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, তবু আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি/ এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে/ বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী/ এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে... কবি রচিত সেই আঠারো সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে ১৯ বছরে পদার্পণ করেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি। এখন এনটিভি আরও নতুন, আরও তরুণপ্রাণ, আরও অগ্রগামী।
২০০৩ সালের ৩ জুলাই ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে’ স্লোগান নিয়ে গণমাধ্যম দুনিয়ায় পদার্পণ এনটিভির। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, আগামীর কথা স্মরণে রেখে স্বদেশের চেতনা বুকে বৈশ্বিক ভাবনায় প্রতিনিয়ত ঋদ্ধ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জন্মলগ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান। মানবজীবনের বিকাশের যেমন ক্রমপর্যায় রয়েছে, তেমনই প্রতিষ্ঠানের বিকাশেরও রয়েছে ক্রমোত্তরণ বা বিকাশের পর্যায়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে যেমন শিশু এগিয়ে যায় শারীরিক-মানসিকভাবে, তেমনই প্রতিষ্ঠানও এগোয় তার সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও ক্রমাধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন এ কারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ যে নানা সম্ভাবনা ও বিকাশের পর্যায়গুলোর লক্ষণ শুরুতেই এক ঝলক দেখিয়ে দেয়। সেটা দেখিয়েছিল এনটিভি। আর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এনটিভি যুক্ত হয়েছে তথ্য-প্রযুক্তি ও ডিজিটাল দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে।
এই দীর্ঘ পথচলায় এনটিভি কুড়িয়েছে অগণিত দর্শকের ভালোবাসা। দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। দর্শকের অবিরাম তথ্য ও বিনোদনের চাহিদা পূরণ, দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা ও রুচিশীল বিনোদনের মাধ্যমে সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেওয়াই ছিল এনটিভির অন্যতম প্রয়াস। ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুস্থ মানস। ১৮ বছর পূর্তির এই শুভক্ষণে দর্শক-শ্রোতা ও পাঠকের ভালোবাসাই প্রমাণ করে, সঠিক পথেই আছে এনটিভি। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ঠাঁই না দিয়ে, নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ও সঠিক তথ্য সরবরাহে দৃঢ়প্রত্যয় এনটিভির।
আজ ৩ জুলাই, শনিবার এনটিভির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী। শুভকামনা জানিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা কবি, শিল্পী-সাহিত্যিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব, বিনোদন অঙ্গনের সারথিসহ অনেকেই। দেশ-বিদেশের অগণিত দর্শকের অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করছে এনটিভি : রাষ্ট্রপতি
এনটিভির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এনটিভির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ, কলাকুশলী, সংবাদকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’
গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের বিকাশ, জনমত গঠন এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। বর্তমান সরকার অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। গণমাধ্যম যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা একান্ত অপরিহার্য। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোকে দেশের সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বস্তুনিষ্ঠ অনুষ্ঠান প্রচারে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমসমূহ দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় অধিকতর দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারি মোকাবিলায় গণমাধ্যমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমি জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ করোনাবিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এনটিভি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এনটিভির প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সময়ের সাথে আগামীর পথে—এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে এনটিভি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও রুচিশীল অনুষ্ঠানমালা এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করে আসছে। এর মাধ্যমে তারা তুলে ধরছে বাঙালি সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। আমি আশা করি, সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রেখে সৃজনশীল পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এনটিভি বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের মাঝে একটি বিশেষ স্থান করে নেবে।’ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এনটিভির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এনটিভির সাফল্য কামনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
এনটিভির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ১৮তম বছর পূর্ণ করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি এনটিভির পরিচালনা পর্ষদ, সাংবাদিক, কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।’
আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় গণমাধ্যমের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরাই দেশে প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালুর অনুমোদন দিই। আমাদের সরকার রূপকল্প-২০২১ এবং রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্য অর্জনে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৯ সাল থেকে গণমাধ্যম, তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ৪৫টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্থাপন করেছি। বর্তমানে দেশের সব চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
২০২০ সালকে তাৎপর্যপূর্ণ বছর উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আমরা পরিকল্পনামাফিক অনুষ্ঠানসমূহ উদযাপন করতে পারিনি। জনগণের সার্বিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে জনসমাগম হয়, এমন অনুষ্ঠান স্থগিত করেছি। টেলিভিশন, বেতার এবং ডিজিটাল মাধ্যমে কিছু কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান বা সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের মানুষের উন্নত মনন গঠনে এবং জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ নানা অপতৎপরতা দমনে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অবদান রাখতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশা আল্লাহ।’
শেখ হাসিনা আশা করেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এনটিভি সঠিক তথ্য-উপাত্ত পরিবেশন ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বজায় রেখে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার ও রুচিশীল অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে আমাদের দেশজ শিল্প, সংস্কৃতি ঐতিহ্য বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।’
১৮ বছর ধরে অনবদ্যভাবে কাজ করে আসছে এনটিভি : তথ্যমন্ত্রী
এনটিভির ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘এনটিভির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে এনটিভি পরিবারকে আমি অভিনন্দন জানাই। এনটিভি বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং সমাজের চিত্র পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে গত ১৮ বছর ধরে অনবদ্যভাবে কাজ করে এসেছে। আমি আশা করব, ভবিষ্যতের পথচলায় গত ১৮ বছর ধরে যেভাবে সমাজের চিত্র পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রে, সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে এবং আমাদের সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করেছে, শিল্প ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ করেছে, ভবিষ্যতের পথচলাতেও একই ভাবে কাজ করবে।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে সারথি হিসেবে এনটিভি কাজ করবে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে। এনটিভি পরিবারকে ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে অসংখ্য অভিনন্দন।’
এনটিভি নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা ধরে রেখেছে : মির্জা ফখরুল
এনটিভির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই দীর্ঘ ১৮ বছরে এনটিভি বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ইলেকট্রনিক চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে, অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও এনটিভি যে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, তাদের যে স্বকীয়তা, সেটাকে তারা ধরে রেখেছে। বিশেষ করে তাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা ও একই সঙ্গে তাদের বিভিন্ন শিক্ষনীয় যে সমস্ত অনুষ্ঠান রয়েছে, সেগুলো দর্শকদের কাছে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করছি, এনটিভি তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে তারা তাদের ভূমিকা পালন করবে ইতিবাচক ভাবে।’
সবার সহযোগিতায় আমরা আজকের পর্যায়ে এসেছি : এনটিভির চেয়ারম্যান
এনটিভির দেড় যুগ পূর্তি ও ১৯ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সম্মানিত দর্শক, কেবল অপারেটর, বিজ্ঞাপনদাতা ও সর্বস্তরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এনটিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী।
পাশাপাশি তিনি এই দীর্ঘ চলায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, শিল্পী-কলাকুশলী সবাইকে ধন্যবাদ জানান। শুভেচ্ছা জানিয়ে উৎসাহিত করায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, “আজকে আপনাদের-আমাদের সবার প্রিয় চ্যানেল এনটিভি ১৮ বছর পার করে ১৯ বছরে পদার্পণ করছে। আজকের এই শুভ জন্মদিনে আমি পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, যাঁরা আমাদের আজকের এই জন্মদিনে অভিনন্দন জানিয়েছেন, শুভেচ্ছাবাণী দিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, কেবল অপারেটর, বিজ্ঞাপনদাতা—যাঁরা বিভিন্ন সময় আমাদের চলার পথে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, সবাইকে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আপনারা জানেন, আপনাদের প্রিয় চ্যানেল ৩ জুলাই শুরু করে ‘সময়ের সাথে আগামী পথে’ স্লোগানে আজ ১৮ বছর পার করেছে।”
সবার সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে এনটিভির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই দীর্ঘ যাত্রায় আপনাদের সহযোগিতা না থাকলে আমরা আজ এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। আমাদের এই কাজের পেছনে এনটিভির সদস্যরা কাজ করছেন। আপনারা জানেন, করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব এখন আতঙ্কিত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এই সময়েও আমাদের সংবাদকর্মীরা, আমাদের অনুষ্ঠান বিভাগ, আমাদের অনলাইন বিভাগ, কলাকুশলী সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। চেষ্টা করছেন, আপনাদের প্রিয় চ্যানেলকে অতীতের মতো সব সংবাদ সবার আগে উপস্থাপন করার জন্য। এই সময়ে বাসায় বসে থেকেও যেন আপনারা বিরক্ত অনুভব না করেন, সে জন্য আমাদের অনুষ্ঠান বিভাগ, অনলাইন বিভাগ ও সব কলাকুশলী অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।’
বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক করোনা-পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের দেশে আবারও শুরু হয়েছে লকডাউন। সরকারের যে নির্দেশনা আমাদের কাছে এসেছে, আমরা আশা করব, সবাই মিলে সেগুলো পালন করব। আমরা সবাই যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরকারের দিকনির্দেশনা, বিশেষজ্ঞ পরামর্শ কমিটির নির্দেশনা পালন না করি, তাহলে সরকারের একার পক্ষে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। আমাদের নিজেদের স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সব বিধিমালা মেনে চলতে হবে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, ইনশা আল্লাহ, আল্লাহর দয়ায় আমরা এই কঠিন সময় পার করতে পারব।’
এনটিভির চেয়ারম্যান আশা করেন, ‘আগামী দিনে আল্লাহ সব সমস্যা আমাদের দেশ থেকে তুলে নেবেন। আমাদের সুন্দর বাংলাদেশ আবার আমরা পরিচালনা করতে পারব।’ এ সময় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী আরও বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, আরও বড় পরিসরে আজকের এই দিনটি পালন করব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। আমাদের আশা ছিল, আমাদের মহান নেতাকে সামনে রেখে অনেক বড় আকারে সুন্দরভাবে পরিচালনা করব। কিন্তু এই মহামারির কারণে তা হয়ে ওঠেনি। আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে ইনশা আল্লাহ যেভাবে আপনারা আমাদের সাহায্য করেছেন, সামনেও করবেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে আপনাদের সাথে নিয়ে আপনাদের চ্যানেলকে আপনাদের দোরগোড়ায় সেভাবে পৌঁছে দেব, যেভাবে আপনারা চান।’
শুরু থেকেই আধুনিক সম্প্রচার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করে এনটিভি। আর এই কয়েক বছরে শব্দ, ছবি আর সম্প্রচারে অন্য চ্যানেলের সঙ্গে একটা বড় পার্থক্য গড়ে নিয়েছে চ্যানেলটি। প্রযুক্তির বিস্ময়ের সঙ্গে দর্শককে পরিচয় করিয়ে দিতে খুব একটা সময় নেয়নি এনটিভি। দেশে-বিদেশে ব্যাপ্তি আর সম্প্রচার সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চ্যানেলের অনুষ্ঠানে এসেছে বৈচিত্র্য। গড়ে উঠেছে এনটিভির নিজস্ব চরিত্র, যার নেপথ্যে রয়েছে সুচিন্তিত-সুপরিকল্পিত পরিচালনা ও দক্ষ কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম।
ডিজিটাল দুনিয়ায়ও শক্ত অবস্থানে এনটিভি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি চালু হয় এনটিভির অনলাইন বিভাগ। যখনকার খবর তখনই দেখা যায় এনটিভির অফিশিয়াল নিউজ পোর্টাল এনটিভিবিডি ডটকম-এ। পাশাপাশি এনটিভিতে সম্প্রচারিত সব খবর ও অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ছবি পাওয়া যায় এই ওয়েবসাইটে (www.ntvbd.com)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক কোটি ৩৫ লাখ লাইক ও এক কোটি ৫৮ লাখ ফলোয়ার নিয়ে দেশের টেলিভিশনগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে এনটিভি। দর্শক প্রতি মাসে প্রায় ৩০ কোটি মিনিট ভিডিও দেখেন শুধু এনটিভির ফেসবুক পেজ থেকে। লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার মিলিয়ে এনগেজমেন্টও হয় প্রচুর। এ ছাড়া টুইটার, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লাইকি এবং পিন্টারেস্টেও রয়েছে এনটিভি অনলাইনের জোরালো উপস্থিতি।
ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে বিশ্বের দর্শককে মাতিয়ে রেখেছে এনটিভি অনলাইন। ২০১৪ সালেই ইউটিউবের প্রিমিয়াম পার্টনারের স্বীকৃতি পায় এনটিভি। লাইভ টিভি, খবর, নাটক, সিনেমা, গান, রান্না, ইসলামিক অনুষ্ঠান, লাইফস্টাইল, ভ্রমণসহ এনটিভির সিএমএইচ-এ রয়েছে ২০টি চ্যানেল। এসব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এক কোটি ৩০ লাখ। তুমুল জনপ্রিয় এসব ভিডিও ৩.৪ বিলিয়ন বা ৩৪০ কোটি বার দেখেছেন দর্শক, যা দেশের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। শুধু তা-ই নয়, ১৮টি ইউটিউবের সিলভার ও গোল্ড প্লেবাটন পেয়েছে একমাত্র এনটিভি।
নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে এনটিভি অনলাইন। চালু করেছে অ্যাগ্রিগেটর পোর্টাল এনটিভি কানেক্ট। শুধু তা-ই নয়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ই-কমার্স পোর্টাল এনটিভি বাজার নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে।
দর্শক, শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এনটিভি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে—বর্ষপূর্তির শুভক্ষণে এমনই প্রত্যাশা।