সাবেক চরমপন্থিদের স্বপ্নচাষ কৃষি সমিতিকে চার বিঘা জমি দিল সরকার

Looks like you've blocked notifications!
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির রাজশাহীর ৫৭ জনের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তাদের সমন্বিত কৃষি সমিতির জন্য সোমবার চার বিঘা জমি কেনা হয়। ছবি : এনটিভি

দেশে সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে চরমপন্থি সর্বহারাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির রাজশাহীর ৫৭ জনসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৫৯৫ জন ওই বছরের ৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের পুনর্বাসনে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজশাহী জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে রাজশাহীর ৫৭ জনের সমন্বয়ে ‘রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতি লিমিটেড’ গঠন করে দেওয়া হয়। ওই সমিতির জন্য গতকাল সোমবার চার বিঘা জমি কেনা হয়েছে।

আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫৫ লাখ টাকা হাতে পেয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই টাকার মধ্য থেকে সমিতির জন্য রাজশাহীর রক্তাক্ত জনপদখ্যাত বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে চার বিঘা জমি কিনেছে জেলা প্রশাসন।

সোমবার দুপুরে জমি বিক্রেতারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জমির দাম বুঝে পেয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়ে দলিল জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করে দেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারী ৫৭ জন চরমপন্থি এই জমি তাদের আর্থিক অবলম্বন হিসেবে চাষবাস করে জীবনযাপন করতে পারবেন।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনাদের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে আপনাদের স্বাবলম্বী করতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। যাদের নামে মামলা রয়েছে, তাদের মামলা নিষ্পত্তি করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল আরও বলেন, ‘আত্মসমর্পণকারীদের পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এর মধ্য থেকে এই জেলায় প্রথম ধাপে ৫৭ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সেই অর্থের মধ্য থেকে বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে ১৪ লাখ টাকায় চার বিঘা জমি কেনা হলো। প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে ২৫ বিঘা জমি কেনা হবে।’

রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু বলেন, ‘আমি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে চরমপন্থা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি।’ অন্ধকার জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজীউর রহমান বলেন, ‘অন্ধকার জীবন আমাদের দলের কেউই আর চান না। এ জীবনে আমাদের শান্তি ছিল না। ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না, খেতে পারতাম না। সবসময় মাঠেঘাটে থাকতে হতো। সে কারণে দলের ৫৭ জন সদস্য নিয়ে আমি আত্মসমর্পণ করেছিলাম। আত্মসমর্পণ করে আমরা সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি।’

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) যুগ্ম পরিচালক সানোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সনাতন চক্রবর্তী এবং এনএসআইর সহকারী পরিচালক ফরহাদ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আত্মসমর্পণকারী চরমপন্থিদের মধ্যে সমিতির সভাপতি গাজীউর রহমান ও সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু, সহ-সভাপতি মুনছের আলী, কোষাধ্যক্ষ নওশাদ আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।