সারাদেশে আরও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

Looks like you've blocked notifications!
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ছবি : বাসস

প্রকৃত মেধাবীদের খুঁজে বের করতে সারাদেশে আরও বেশি করে আন্তঃস্কুল, আন্তঃউপজেলা, আন্তঃজেলা, আন্তঃকলেজ এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২ এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে এবং সেই সব খেলোয়াড় এই টুর্নামেন্টগুলো থেকেই বেরিয়ে আসবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা, গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইও পড়তে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলা মানে শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা শারীরিক শক্তি জোগায় এবং উদার মন-মানসিকতা গড়ে তোলে। পাশাপাশি, লেখাপড়ায়ও মনোনিবেশ করতে হবে। একটি স্বাধীন দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’

বাংলাদেশের শিশুরা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লেখাপড়া ও খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে চমৎকার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে উন্নীত হয়েছি। এখন আমরা ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশে উন্নীত করতে যাচ্ছি। তোমরাই এই স্মার্ট বাংলাদেশের মূল শক্তি।’

শিশুদের সব সময় সুশৃঙ্খল থাকার, অভিভাবক, শিক্ষক ও বাবা-মায়ের কথা মেনে চলার, বন্ধু, খেলার সাথী ও সহপাঠীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার এবং অটিস্টিকসহ প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তোমাদের নিজেদেরকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে হবে। এখন থেকে মাথায় রাখবে—তোমাকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত হতে হবে। তোমাকে একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।’

নিজেকে একটি ফুটবল পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দাদা, বাবা ও ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবল খেলতেন। তিনি বলেন, ‘শেখ কামাল বাংলাদেশে আজকের আধুনিক ফুটবলের স্থপতি। আবাহনী ক্রীড়া চক্র শেখ কামালের হাতেই প্রতিষ্ঠিত।’ 

শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবল ও হকিসহ সব ধরনের খেলাধুলায় জড়িত ছিলেন- উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান আছে। কামালের স্ত্রী সুলতানা একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং জামালের স্ত্রী রোজিও লেখাধুলায় পারদর্শী ছিলেন।’

‘তাই, আমি একটি ফুটবল পরিবারের সদস্য। আমার নাতি-নাতনিরাও ফুলবল খেলতে ভালবাসে। তারা ফুলবল খেলে। শেখ রেহানার নাতি-নাতনিরাও ফুটবল খেলে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর তার সরকার তৃণমূল পর্যায়ে থেকে ক্রীড়ার উন্নয়ন শুরু করে এবং আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলকে অভিনন্দন জানান।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিভাগের নালমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিভাগের বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলার দ্বিতীয়ার্ধ উপভোগ করেন। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ-২০২২ এর ফাইনাল ম্যাচে বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নালমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারিয়ে শিরোপা লাভ করে।

ফাইনালের অপর ম্যাচে রংপুর বিভাগের পূর্ব পচাপুকুর প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয় ঢাকা বিভাগের বিনোদপুর কলেজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে (রাজবাড়ি সদর) হারিয়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ-২০২২ অর্জন করে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত  দেশব্যাপী  টুর্নামেন্টে ৬৫ হাজার ৫২৯টি স্কুল থেকে মোট ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৯৩ জন ছেলে এবং ৬৫ হাজার ৫২৮টি স্কুল থেকে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৯৭৬ জন মেয়ে অংশগ্রহণ করে।

প্রধানমন্ত্রী দুটি টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার ও পদক তুলে দেন।

এবার বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা জাহিম (৪ গোল) এবং সেরা খেলোয়ার মনিরুল ইসলাম। তারা দুজনেই পূর্ব পচাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাইজ মানি ও গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করে।

বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতা বাঞ্ছারামপুর মডেল প্রথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী নূর নাহার আকতার ও নালমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রুমি। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাইজ মানি ও গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল গ্রহণ করে। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।