সিডরের ১৫ বছর, ঝালকাঠিতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি এখনও

Looks like you've blocked notifications!
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তীরে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। ছবি : এনটিভি

আজ ১৫ নভেম্বর, প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৫তম বার্ষিকী। ২০০৭ সালের এই দিনে সিডর আঘাত হেনেছিল উপকুলীয় জেলা ঝালকাঠিতে। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ঝালকাঠির বেড়িবাঁধসহ রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট। প্রাণহানিও ঘটে।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৫ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর তীরে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যার ফলে ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাস হলে এই অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়েও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে নলছিটি উপজেলার বারইকরণ খেয়াঘাট এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার বেরিবাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে আজ পর্যন্ত স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। একবার সংস্কার করা হলেও তা বেশি দিন টেকেনি। বেরিবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী বসতঘর, মসজিদ, মাদ্রাসা, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে।

শুধু বারইকরণ খেয়াঘাট নয়, জেলার মগড়, উত্তমাবাদ, গাবখান চ্যানেল, সারেঙ্গল, শাচিলাপুর, বাদুরতলা লঞ্চঘাট ও কাঁঠালিয়া-রাজাপুরের বিভিন্ন এলাকার সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর অর্ধশত স্থানে ১১কিলোমিটার স্থায়ী বেরিবাঁধ না থাকায় ইতোমধ্যে অনেকের বসত বাড়ি, দোকানপাট, বিদ্যালয়ের ভবনসহ বহু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বন্যা হলেই নদী তীরবর্তী মানুষগুলো আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে। তাঁরা একাধিকবার স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

ঝালকাঠির বারইকরণ এলাকার অধিবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেড়িবাঁধটি ঘূর্ণিঝড় সিডরে ভেঙে যায়। এরপর থেকে স্থায়ীভাবে আর নির্মিত হয়নি। একবার কোনো রকমের মেরামত করা হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আবারও তা ভেঙে গেছে। এখন বেড়িবাঁধ যে ছিল, তাও দেখা যায় না। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেও তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত। বন্যায় মানুষের ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, এতিমখানা ও মসজিদে পানি ওঠে। আমরা স্থায়ী একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

নদীতীরের হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার হাফেজ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিডর থেকে বেড়িবাঁধটি ভাঙন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত  এটি স্থায়ীভাবে মেরামতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমাদের এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, মাদ্রাসা ও মসজিদ আছে, একটি পুরনো খেয়াঘাটও রয়েছে, ৫০০ একরের মতো জমি আছে, যাতে ফসল হয়, এগুলো পানিতে তলিয়ে গেলে বিপদে পড়তে হচ্ছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

নদীতীরের বাসিন্দা তাজনেহার বেগম বলেন, ‘আমাদের ঘরবাড়িতে পানি উঠে তলিয়ে যায়। বেড়িবাঁধটি ভাঙা অবস্থায় আছে। মানুষ হাঁটাচলা করার অবস্থায়ও নেই। অনেক স্থানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে চলতে হয়। বেড়িবাঁধটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হলে আমরা বেঁচে যেতাম।’

এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রকিব হোসেন বলেন, ‘বারইকরণ খেয়াঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আছে। আমরা তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে এসব বাঁধ নির্মাণে কাজ করা হবে।’