সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বেড়ে নদীভাঙন, বন্যার আশঙ্কা

Looks like you've blocked notifications!
সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তীব্র স্রোতে হচ্ছে নদীভাঙন। ছবি : এনটিভি

সিরাজগঞ্জে বেড়ে চলেছে যমুনা নদীর পানি। এতে করে নদীর তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এখনও বিপৎসীমার ১ দশমিক ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতের কারণে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে বোরো ধান, বাদাম, পাট, আখসহ বিভিন্ন ফসল। গত দুদিনে এনায়েতপুরে ২৫ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সদর উপজেলার শিমলা, চড়চাপড়ি, বালী ঘুরকি, মাটিয়াপুর এলাকায় নদী ভাঙনে ব্যাপক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে বন্যার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

এরই মধ্যে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়ে  কাজিপুরের চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এর ফলে বাঁধের অভ্যন্তরের প্রায় দুই হাজার একর জমি যমুনায় বিলিন হবার উপক্রম হয়েছে। ওই বাঁধে থাকা বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি এরই মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিমলা গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, ‘জৈষ্ঠ মাসে নদীতে এত বেশি পানি হয়, তা আগে দেখিনি। চরে এ বছর ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলাম। পানির কারণে ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। নদী ভাঙনে অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাদাম, পাট, আখও পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীভাঙন ও পানি বৃদ্ধির কারণে এ অঞ্চলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এনায়েতপুরের পাকরতলা গ্রামের কামরুল জামান বলেন, ‘তিন দিন হলো এনায়েতপুরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ২৫ বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে বহু স্থাপনা। ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ এলাকার মানুষ।’

কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজী জানান, নাটুয়াপাড়া বাঁধটি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। সেইসঙ্গে আমাদের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ব্যক্তিগতভাবে এই বাঁধ রক্ষায় তিনি বরাদ্দ দিয়েছেন।’

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা, কাজিপুরের ইউএনও জাহিদ হাসান সিদ্দিকী ও চৌহালীর ইউএনও আফসানা ইয়াসমিন বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে তাদের সাহায্য-সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যমুনা নদীতে পানি আরও তিন-চার দিন বাড়বে। পানি বৃদ্ধি পেলেও শহর রক্ষা পয়েন্টে বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে বালুর বস্তা ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। চৌহালীতে ভাঙন রক্ষায় অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’